পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৯৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 —ও কথা থাক্‌। কি নিয়ে কথা বলছিলে?

 —লীলার কথা। এদেশের মেয়েদের শক্তি-সামর্থ্যের কথা। সবই মায়ের লীলা।

 নীলু বলে উঠল—হ্যাঁ, ভালো কথা—বড়দি ভালো ঢাল আর লাঠির খেলা জানে। একবার আকবর আলি লেঠেলের সঙ্গে লড়ি চালিয়েছিল ঢাল আর লড়ি নিয়ে। নীলকুঠির বড় লেঠেল আকবর আলি। বড়দি এমন আগ্‌লেছিল, একটা লড়ির ঘাও মারতি পারে নি ওর গায়ে। শরীরে শক্তিও আছে বড়দির। দুটো বড় বড় ক্ষিত্তুরে ঘড়া কাঁকে মাথায় ক’রে নিয়ে আসতে পারে। এখনও পারে।

 ভবানী বাঁড়ুয্যে হলা পেকে ও অঘোর মুচিকে নিয়ে বাড়ির মধ্যে ঢুকে ডাক দিলেন—ও তিলু, শুনে যাও—ও তিলু, ও বড় বৌ—

 তিলু খোকাকে দুধ খাওয়াচ্ছিল। একটু পরে খোকাকে কোলে ক’রে এসে হলা পেকে উত্তর দিলে—বড়দি, পেটের জ্বালায় এইচি। খাতি দ্যাও, নইলে লুঠ হবে।

 তিলু হেসে বললে—আমি লাঠি ধরতি জানি।

 —সে তো জানি।

 —বার করি ঢাল লড়ি?

 —কিসের লড়ি।

 —ময়না কাঠের।

 অঘোর মুচি বললে—সত্যি বড়দি, হাত বজায় আছে তো?

 —খেলবি নাকি এক দিন? মনে আছে সেই রথতলার আখড়াতে? তখন আমার বয়েস কত—সতেরো-আঠারো হবে—

 —উঃ, সে যে অনেকদিনের কথা হয়ে গেল। তখন রথতলার আখড়াতে মোদের বড্ড খেলা হোত। মনে আছে খুব।

 —বসো, আমি আসচি।

 একটু পরে দুটি বড় কাঁটাল দু’ হাতে বোঁটা ঝুলিয়ে নিয়ে এসে তিলু ওদের

৯০