পাতা:ইতিকথার পরের কথা.pdf/১৭০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অর্ব্বধানো ছোট অগভীর কুয়া, চৈত্র-বৈশাখ মাসে কোনটাতে একটু তলানি জল থাকে, কোনটা একেবারে শুকিয়ে যায়। যতটুকু ঠাই পায় ঘর তুলতে চাষী তায়ও সবটুকু জুড়ে বড় করে ঘর বানাতে পারে না, ছোট নীচু কুড়ে ঘর বঁধে। অনেক দিনের পুরানাে গ্রামও আজ এমন রিক্ত যে দেখে মনে হয় অস্থায়ী বন্তি বুঝি, যে কোন দিন মানুষগুলি চলে যাবে গা ছেড়ে, খা-খা করবে: শূন্ত পরিত্যক্ত ভিটগুলি। চােখে পড়ে ও-রকম পরিত্যক্ত দু-একটা সঁওতাল বন্তি, জমিদার-জোতদারের শোষণ আর অত্যাচার সইতে না পেরে দল বেঁধে চলে গেছে। বড় একটি গ্রাম পড়ে মাঝ-পথে, নাম আনিখা । আনিখার কাছাকাছি কঁচা রাস্তাটা পড়েছে বঁধানো পথে, মাঝখান দিয়ে ডাকঘরের সামনে দিয়ে পথটা চলে গেছে। কয়েকটি পাকা-বাড়িও আছে আনিখায়, হাপ্তায় দুদিন গ্রাম-প্রান্তে হাট বসে। এখানে গুড় তৈরী হয়, তিল আর সর্ষের চাষ হয় ভাল, প্রতি বছর প্রচুর পরিমাণে শহরে চালান যায় কলে পিষে তেল তৈরী হবার জন্য। তঁাতের কাপড়-গামছা কিছু তৈরী হয়। আগে ত্রিশ ঘরের বেশী তাতির বাস ছিল, একটু নাম ছিল আনিখার কাপড়-গামছার। যুদ্ধের কী বছরে দশ-বারো ঘর উৎখাত হয়ে গেছে সুতোর অভাবে, অন্যেরা টিকে আছে শোচনীয় অবস্থায়, অনেকের তাত পর্যন্ত মহাজন দাদানদারের কাছে বাধা। পথের ধারে পান-বিড়ি, চি ডে-মুড়ি, দই-মিষ্টির, দোকান, গ্রাম্য মুদীখানা, মসলাপাতি তেল নুন জ্বালানি কাঠ থেকে চায়ের প্যাকেট চিরুণী কঁাটা মাথার তেল সব কিছু মেলে। একটি বেঁটে খাটো ওষুধের আলমারি নিয়ে চিরঞ্জীব ডাক্তারের ওষুধের দোকান। কুণ্ডুর দই-মিষ্টির দোকানে চিনির চায়ের সঙ্গে গুড়ের চা-ও মেলে, দুচির-করা যাশের বেঞ্চে বসে। কেঁাচার খুটে গরম কাচের গেলাস ধরে জিরিয়ে জিরিয়ে পান করা যায়। গুড়ের চা আগে রুচিত, শহরে খাটতে যাওয়ার পর রুচিটা বদলে গেছে। বেশী দামে আধা গেলাস চিনির চা-ই খায় কৈলাস—শুধু চা। আজ ঠাণ্ডা পড়েছে বেশ, তাড়াতাড়ি শীত এগিয়ে আসছে অথবা কে জানে, এ বছর। ) &8