পাতা:ইতিকথার পরের কথা.pdf/২১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কিছু বলে দিতে হয় না। দয়াকে । তায়ই নিয়ম রীতি ব্রত উপোসের খাতিরে খাতিরে সাত দিন সাত রাত ঘনরাম তাকে আঙলি দিয়ে ছোয়নি। শান্ত চোখে চেয়েছে, অক্লেশে শ্রান্তি নিয়ে ঘুমিয়েছে, তার মধ্যে তিন রাত্রে চোর ধরা পড়ার হাঙ্গামায়, কলেরা রোগে একজন মারা যাওয়ার হাঙ্গামায় আর পল্লী সহায়ক সংঘের বঁােদর কাঁটার হাঙ্গামা বাধানোর হাঙ্গামায় উঠে গিয়ে দু-চার ঘণ্টা বাইরেও কাটিয়ে এসেছে। বঁাচবে না জানা কথা, তবু কোলে নিতে হয় মাই দিতে হয় মানুষ করতে হয় পেটের নতুন বাচ্চাটাকে। কোলের ঘুমন্ত ছেলেটাকে শুইয়ে দেবার ছলেই যেন আলুথালু হয়ে যায় দয়ার পরনের ছেড়া কাপড়খানা। কতকাল ঘনরাম তাকে নতুন একটা কাপড় দেয়নি ভেবে হঠাৎ রাগ করতে গিয়ে সে থেমে যায়। নিজের কাপড়ের কথা ভাবতে গিয়ে এতক্ষণে তার চোখে পড়েছে যে অভ্রান মাসে ঘনরামের পরনে শুধু একখানি গামছা । দুধ খায় না, মাছ খায় না, দু-বেলা পেট ভরে খায় না, গায়ে একটু তেল মাখে না-হাড় বেরিয়ে আছে কণ্ঠার—তবু রোগ শিবের মত কী জমকালো চেহারা মানুষটার । ঘনরাম বলে, জানো, কাগজে নাকি এক খবর বেরিয়েছে। মজাদার। কেউ কেউ ফের বলছে ভীষণ খবর। দুপুরবেলা রসিক খুড়োর দাওয়ায় খুব জটিল হয়েছে । কী খবর ? ছেলেপিলে হওয়া বন্ধ না করলে নাকি মোদের দুর্দশা ঘুচিবে না। বডড বেশী লোক বেডে গেছে দেশে—এত লোকের খাবার নেই। তাই দুভিক্ষে লোক মরে। এটা শুধু খবর এসেছে—এবার নাকি হুকুম হবে-ছেলেমেয়ে হতে পারবে না। কারো, কণ্টোল ব্যবস্থা হবে। হঠাৎ হা-হা করে গলা ছেড়ে হাসে ঘনরাম। হুকোটা রেখে দিয়ে এগিয়ে গিয়ে উবু হয়ে বসে। দয়ার পা ধরতে যায়। ቆም পায়ে হাত দিও না !