পাতা:ইতিহাস - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১২৫

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

সিরাজদ্দৌলা


স্কুলে যাহাদিগকে ইতিহাস মুখস্থ করিতে হইয়াছে তাহাদের সকলকেই স্বীকার করিতে হইবে, ভারত-ইতিবৃত্তে ইংরাজ শাসনকালের বিবরণ সর্বাপেক্ষা নীরস। তাহার একটা কারণ, এই বিবরণে মানবস্বভাবের লীলা পরিস্ফুট দেখা যায় না। —গবর্নর আসিলেন, যুদ্ধ হইল, জয়পরাজয় হইল, আইন হইল, পাঁচ বৎসর কাটিয়া গেল, গবর্নর চলিয়া গেলেন!

 অবশ্য, ব্যাপারটা সত্যই এমন সম্পূর্ণ হৃদয়সম্পর্কশূন্য কলের কাণ্ড নহে। ভারত-শতরঞ্চ-মঞ্চে সাদা ও কালো ঘরে নানা পক্ষে যেসকল বিচিত্র চাল চালিতেছিলেন, তাহার মধ্যে ভুলভ্রান্তি রাগদ্বেষ লোভমোহের হাত ছিল না এমন নহে। কিন্তু রাজভক্তি ও পাঠ্যসমিতির প্রতি লক্ষ রাখিয়া লেখকদিগকে সংকীর্ণ সীমায় সভয়ে পদক্ষেপ করিতে হয়। সেইজন্য অন্তত বাংলায় রচিত ইতিহাসে ইংরাজ-শাসনের অধ্যায় অত্যন্ত শুষ্ক এবং শীর্ণ।

 আরও একটা কথা আছে। মোগল-পাঠানের সময় প্রত্যেক সম্রাট স্বতন্ত্র প্রভুরূপে স্বেচ্ছামতে রাজ্যশাসন করিতেন, সুতরাং তাহাদের স্বাধীন ইচ্ছার আন্দোলনে ভারত-ইতিবৃত্তে পদে পদে রসবৈচিত্র্য তরঙ্গিত হইয়া উঠিয়াছিল। কিন্তু ইংরাজের ভারতবর্ষে ইংলণ্ডের রাজতন্ত্রের শাসন। তাহার মধ্যে হৃদয়ের লীলা অত্যন্ত গৌণ ব্যাপার। মানুষ নাই, রাজা নাই, কেবল একটা পলিসি অতি দীর্ঘ পথ দিয়া ডাক বসাইয়া চলিয়াছে, প্রতি পাঁচ বৎসর অন্তর তাহার বাহক বদল হয় মাত্র।

 সেই পলিসি কিরূপ সূক্ষ্ম জটিল সুদূরব্যাপী, এই মাকড়সাজালের সূত্রগুলি জিব্রল্টার ইজিপ্ট এড়েন প্রভৃতি দেশ দেশান্তর হইতে লম্বমান হইয়া কেমন করিয়া ভারতবর্ষকে আপাদমস্তক ছাঁকিয়া ধরিয়াছে, তাহার বিবরণ আমাদের পক্ষে কৌতুকাবহ সন্দেহ নাই— এবং সেই বিবরণ

১২১