পাতা:ইতিহাস - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১২৭

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

সিরাজদ্দৌলা

 মাতামহ আলিবর্দির ক্রোড়ে নবাব-রাজহর্ম্যে সিরাজদ্দৌলা যখন শিশু তখন ভাবী ইংরাজ-রাজমহিমাও কলিকাতায় সওদাগরের কুঠিতে ভূমিষ্ঠ হইয়া অসহায় শিশুলীলা যাপন করিতেছিল। উভয়ের মধ্যে একটি অদৃষ্ট বন্ধন বাঁধিয়া দিয়া ভবিতব্যতা আপন নিদারুণ কৌতুক গোপন করিয়া রাখিয়াছিল।

 প্রমোদের মোহমত্ততায় এই প্রলয়নাট্যের আরম্ভ হইল। ভাগীরথীতটে হীরাঝিলের নিকুঞ্জবনে বিলাসিনীর কলকণ্ঠ এবং নর্তকীর নূপুরধ্বনি মুখরিত হইয়া উঠিল। লালসার লুব্ধহস্ত গৃহস্থের রুদ্ধগৃহের মধ্যেও প্রসারিত হইল।

 এ দিকে নেপথ্যে মাঝে মাঝে বর্গিদলের অশ্বক্ষুরধ্বনি শুনা যায়, অস্ত্রঝঞ্চনা বাজিয়া উঠে। তাহাদের আক্রমণ ঠেকাইবার জন্য বৃদ্ধ আলিবর্দি দশ দিকে ছুটাছুটি করিতে লাগিলেন। এই উৎপাতের সুযোগে ইংরাজ বণিক কাশিমবাজারে একটি দুর্গ ফাঁঁদিল এবং স্থানে স্থানে আত্মরক্ষার উপযোগী সৈন্য সমাবেশ করিতে লাগিল।

 বণিকদের স্পর্ধাও বাড়িতে লাগিল। তাহারা দেশী-বিদেশী মহাজনদিগের নৌকা জাহাজ লুঠতরাজ করিবার চেষ্টা করিতে লাগিল। কোম্পানির কর্মচারীগণ আত্মীয়বন্ধুবান্ধব-সহ বিনাশুল্কে নিজ হিসাবে বাণিজ্য চালাইতে প্রবৃত্ত হইল।

 এমন সময়ে সিরাজদ্দৌলা যৌবরাজ্য গ্রহণ করিলেন এবং ইংরাজের স্বেচ্ছাচারিতা দমন করিবার জন্য কঠিন শাসন বিস্তার করিলেন।

 রাজমর্যাদাভিমানী নবাবের সহিত ধনলোলুপ বিদেশী বণিকের দ্বন্দ্ব বাধিয়া উঠিল। এই দ্বন্দ্বে বণিক-পক্ষে গৌরবের বিষয় কিছুই নাই। সিরাজদ্দৌলা যদিচ উন্নতচরিত্র মহৎ ব্যক্তি ছিলেন না, তথাপি এই দ্বন্দ্বের হীনতা মিথ্যাচার প্রতারণার উপরে তাঁহার সাহস ও সরলতা,

১২৩