পাতা:ইতিহাস - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৩৮

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

ইতিহাস

পুরাতন খণ্ড-ইতিহাস বহুযুগ পরে মহাভারতে ও রামায়ণে নানা বিকারসহকারে একত্র সংযোজিত হইয়াছিল।

 কিন্তু প্রতিপদক্ষেপে যখন আর বন ছিল না এবং বনে যখন আর রাক্ষস ছিল না, যক্ষরক্ষকিন্নরগণ যখন দুর্গম পর্বতে নির্বাসিত হইয়া জনপ্রবাদে ক্রমশ অলৌকিক আকার ধারণ করিল, অর্জুনবিজয়ী কিরাতেশ্বর ধূর্জটি যখন দেবপদে উত্তীর্ণ হইলেন, প্রতিকূল প্রকৃতি এবং মানবের সংঘাত যখন দূর হইয়া গেল, যখন সুদীর্ঘ শান্তিকালে সূর্যকরোত্তপ্ত ভারতবর্ষে ব্রাহ্মণ সকলের প্রধান হইয়া আপন ঔদাস্যধর্মের বিপুলজাল হিমালয় হইতে কুমারিকা পর্যন্ত নিক্ষেপ করিল, তখন হইতে আর ইতিহাস রহিল না। ব্রাহ্মণের ধর্ম শত শত নব নব পুরাণে গ্রথিত হইতে লাগিল, কিন্তু জনসংঘ ক্রমে শিথিলীভূত হইয়া কোথায় ছড়াইয়া পড়িল, তাহাদের আর কোনো কথাই নাই। অতীত হইতেও তাহারা বিচ্যুত হইল, ভবিষ্যতের সহিতও তাহাদের যোগ রহিল না।

 আসল কথা, ঐক্যের ধর্ম প্রাণধর্মের ন্যায়। সে জড়ধর্মের ন্যায় কেবল একাংশে বদ্ধ থাকে না। সে যদি এক দিকে প্রবেশ লাভ করে তবে ক্রমে আর-এক দিকেও আপনার অধিকার বিস্তার করিতে থাকে। সে যদি দেশে ব্যাপ্ত হইতে পায় তবে কালেও ব্যাপ্ত হইতে চায়। সে যদি নিকট এবং দূরের মধ্যে বিচ্ছেদ পূরণ করিতে পারে তবে অতীত এবং ভবিষ্যতের সঙ্গেও আপন বিচ্ছিন্নতা দূর করিতে চেষ্টা করে।

 এই অখণ্ডতার চেষ্টা এত প্রবল যে, অনেক সময়ে তাহা কল্পনার দ্বারা ইতিহাসের অভাব পূরণ করিয়া ইতিহাসকে ব্যর্থ করিয়া দেয়। এইজন্যই সুদীর্ঘ কল্পনাজাল বিস্তার করিয়া রাজপুতগণ চন্দ্রসূর্যবংশের সহিত আপন সংযোগ সাধন করিয়াছিল।

১৩৪