পাতা:ইতিহাস - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৩৯

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

ঐতিহাসিক চিত্র

 আমরাও বর্ণ এবং কুল-মর্যাদা একটি সূক্ষ্ম সূত্রের মতো অনেক দিন হইতে টানিয়া লইয়া চলিয়াছি। তাহার শ্রেণী-গোত্র-গাঁই-মেল-সম্বন্ধীয় সংক্ষিপ্ত সাহিত্য ভাটেদের মুখে উত্তরোত্তর বাড়িয়া চলিয়াছে। ইহা আমরা ভুলিতে দিতে পারি না। কারণ, আমাদের সমাজে যে ঐক্য আছে তাহ প্রধানত বর্ণগত। সেই সূত্র আমরা স্মরণাতীত কাল হইতে টানিয়া আনিতে এবং অনন্ত ভবিষ্যতের সহিত বাঁধিয়া রাখিতে চাই।

 কিন্তু আমাদের মধ্যে যদি জনগত ঐক্য থাকিত— যদি পরস্পর সংলগ্ন হইয়া জয়ের গৌরব, পরাজয়ের লজ্জা, উন্নতির চেষ্টা আমরা এক বৃহৎ হৃদয়ের মধ্যে অনুভব করিতে পারিতাম, তবে সেই জনমণ্ডলী স্বভাবতই উর্ণনাভের মতো আপনার ইতিহাসতন্তু প্রসারিত করিয়া দূর-দূরান্তরে আপনাকে সংযুক্ত করিত। তাহা হইলে আমাদের দেশের ভাটেরা কেবল গাঁই-গোত্র-প্রবরের শ্লোক আওড়াইত না, কথকেরা কেবল পুরাণ ব্যাখ্যা করিত না, ইতিহাস-গাথকেরা পূর্বকালের সহিত সুখদুঃখগৌরবের যোগ বংশানুক্রমে স্মরণ করাইয়া রাখিত।

 এক্ষণে আমাদের বিশেষ আনন্দের কারণ এই যে, সম্প্রতি বঙ্গসাহিত্যে যে-একটি ইতিহাস-উৎসাহ জাগিয়া উঠিয়াছে তাহার মধ্যে সার্বজনীন সুলক্ষণ প্রকাশ পাইতেছে। তাহাকে আমরা আকস্মিক এবং ক্ষণস্থায়ী একটা বিশেষ ধরনের সংক্রামক রচনা-কণ্ডু বলিয়া স্থির করিতে পারি না। আজকাল সমস্ত ভারতবর্ষের মধ্যে শিক্ষা এবং আন্দোলনের যে জীবনশক্তি নানা আকারে কার্য করিতেছে, এই ইতিহাসক্ষুধা তাহারই একটি স্বাভাবিক ফল।

 ইহাতে এই প্রমাণ হয় যে, কন্‌গ্রেস প্রভৃতির বিক্ষোভ যে আমাদের দেশে বাহ্যিক তাহা নহে। এক-এক সময়ে মনে আশঙ্কা জন্মে যে,

১৩৫