পাতা:ইতিহাস - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৫৫

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

গ্রন্থ-সমালোচনা

লোভের যে-একটা পশুশালা গুপ্ত রহিয়াছে, মাঝে মাঝে তাহার আভাস পাইলে কণ্টকিত হইতে হয়।

 তখন আমাদের মনের মধ্যে এই দ্বন্দ্বের উদয় হয় যে, যে বৈরাগ্য ভারতবর্ষীয় প্রকৃতিকে পরের অন্নে হস্তপ্রসারণ হইতে নিবৃত্ত করিয়া রাখিয়াছে, দুর্ভিক্ষের উপবাসের দিনেও যাহা তাহাকে শান্তভাবে মরিতে দেয়, তাহা স্বার্থরক্ষা আত্মরক্ষার পক্ষে উপযোগী নহে বটে, তথাপি যখন মুসলমানদের ইতিহাসে দেখি উদ্দাম প্রবৃত্তির উত্তেজনার সম্মুখে, ক্ষমতালাভ স্বার্থসাধন সিংহাসনপ্রাপ্তির নিকটে, স্বাভাবিক স্নেহ দয়া ধর্ম সমস্তই তুচ্ছ হইয়া যায় ভাই-ভাই পিতা-পুত্র স্বামী-স্ত্রী প্রভু-ভৃত্যের মধ্যে বিদ্রোহ বিশ্বাসঘাতকতা প্রতারণা রক্তপাত এবং অকথ্য অনৈসর্গিক নির্মমতার প্রাদুর্ভাব হয়— যখন খৃস্টান-ইতিহাসে দেখা যায় আমেরিকায় অস্ট্রেলিয়ায় মাটির লোভে অসহায় দেশবাসীদিগকে পশুদলের মতো উৎসাদিত করিয়া দেওয়া হইয়াছে, লোভান্ধ দাসব্যবসায়ীগণ মানুষকে মানুষ জ্ঞান করে নাই— যখন দেখিতে পাই পৃথিবীটাকে ভাঙিয়-চুরিয়া নিজের কবলে পুরিবার জন্য সর্বপ্রকার বাধা অমান্য করিতে মানুষ প্রস্তুত— ক্লাইভ হেস্টিংস তাহাদের নিকট মহাপুরুষ এবং সফলতালাভ রাজনীতির শেষ নীতি— তখন ভাবি শ্রেয়ের পথ কোন্ দিকে। যদিও জানি যে বল পশুত্বকে উত্তেজিত করে সেই বল সময়ক্রমে দেবত্বকে উদ্‌বোধিত করে, জানি যেখানে আসক্তি প্রবল সেইখানেই আসক্তিত্যাগ সুমহং, জানি বৈরাগ্যধর্মের ঔদাসীন্য যেমন প্রকৃতিকে দমন করে তেমনি মনুষত্বে অসাড়তা আনে এবং ইহাও জানি অনুরাগধর্মের নিম্নস্তরে যেমন মোহান্ধকার তেমনি তাহার উচ্চশিখরে ধর্মের নির্মলতম জ্যোতি, জানি যে যেখানে মনুষ্যপ্রকৃতির বলশালিতা-বশত প্রবৃত্তি ও নিবৃত্তির সংঘর্ষ প্রচণ্ড

১৫১