পাতা:ইতিহাস - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬০

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

শিবাজী ও মারাঠা জাতি

 ভারতবর্ষের যে ইতিহাস আমরা বিদ্যালয়ে পড়িয়া থাকি তাহা রাজাদের জীবনবৃত্তান্ত, দেশের ইতিবৃত্ত নহে।

 দেশের লোকের সমগ্র চিত্তে যখন কোনো-একটি অভিপ্রায় জাগিয়া উঠে এবং সর্বসাধারণে সচেষ্ট হইয়া সেই অভিপ্রায়কে সার্থক করিতে চায় ও সেই অভিপ্রায়কে প্রতিকূল আঘাত হইতে বাঁচাইবার জন্য বুহ্যবদ্ধ হইয়া উঠে, তখনই সে দেশ যথার্থভাবে ইতিহাসের ক্ষেত্রে আসিয়া দাঁড়ায়।

 এইরূপ কোনো-একটি এক-অভিপ্রায়কে লইয়া ভারতবর্ষের কোনোএকটি প্রদেশ আপনাকে একচিত্ত বলিয়া উপলব্ধি করিয়াছে, এরূপ অবস্থা ভারতবর্ষের ভাগ্যে অধিক ঘটে নাই।

 কোনো দেশের লোক যখন এইরূপে ঐক্য উপলব্ধি করে তখন তাহারা স্বভাবতই সেই উপলব্ধিকে ইতিহাসে প্রকাশ না করিয়া থাকিতে পারে না। যে-সকল ঘটনা বিচ্ছিন্ন, যাহা আকস্মিক, দেশের লোকের চিত্তে যাহার কোনো অখণ্ড তাৎপর্য নাই, দেশের লোক তাহাকে সহজেই ইতিহাসরূপে গাঁথিয়া রাখে না, কারণ গাঁথিয়া রাখার কোননা-একটি সূত্র তাহারা নিজেদের মনের মধ্যে পায় না।

 এইজন্য আধুনিক ভারতের রাজকীয় বৃত্তান্ত অধিকাংশই বিদেশীর লেখা। দেশের সাধারণ লোকে এইসকল বৃত্তান্ত স্মরণীয় করিয়া রাখিবার জন্য কোনো উৎসাহ বোধ করে নাই।

 সমগ্র দেশের কোনো বিশেষ কালের ইতিহাসকে রক্ষা করিবার স্বতঃপ্রবৃত্ত চেষ্টা দেশের লোকের দ্বারা যদি ভারতবর্ষের কোথাও ঘটিয়া থাকে, সে মহারাষ্ট্র দেশে। মহারাষ্ট্রের ‘বখর’গুলি তাহার নিদর্শন।

 যে সময় লইয়া এই-সকল জাতীয় ইতিবৃত্ত রচিত হইতেছিল সেই

৫৬