পাতা:ইতিহাস - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬২

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

ইতিহাস

হইতে ইংলণ্ডের ইতিহাস যেন দেহ ধারণ করিল এবং এই ইতিহাস মানুষের শিক্ষার বিষয় হইয়া উঠিল।

 ভারতবর্ষেও মোগল পাঠানে মিলিয়া রক্তবর্ণ নাট্যমঞ্চে যে অভিনয় করিয়া গিয়াছে তাহাতে রসের অভাব নাই, কিন্তু তাহাতে ইতিহাস জমিয়া উঠে নাই। সুতরাং তাহা পড়িয়া আমাদের কৌতূহল চরিতার্থ হইতে পারে, কিন্তু আমাদের ঐতিহাসিক শিক্ষা লাভ হয় না।

 ভারতবর্ষে কেবল মারাঠা জাতির ও শিখজাতির কিছুকালের ইতিহাসে যথার্থ ঐতিহাসিকতা আছে। কী নিয়মে কিসের প্রেরণায় জাতি গড়িয়া উঠে, কিসের শক্তিতে তাহার উন্নতি হয় এবং কিসের অভাবে তাহার পতন ঘটে, ঘরের দৃষ্টান্ত লইয়া যদি কেহ সেই তত্ত্বের আলোচনা ভারতবর্ষে করিতে চায়, তবে কেবলমাত্র মারাঠা ও শিখের ইতিহাস তাহার সম্বল।

 অথচ বাংলার বিদ্যালয়ে ভারতবর্ষের যে ইতিহাস পড়ানো হয় তাহাতে মোগল-পাঠানের বৃত্তান্ত সকলের চেয়ে বড়ো জায়গা জুড়িয়া আছে। সেই বৃত্তান্ত দেশের লোকের বৃত্তান্ত নহে; সেই বৃত্তান্তে ভারতবর্ষ কেবল উপলক্ষ্য মাত্র; অর্থাৎ ভারতবর্ষ এই বৃত্তান্তের ফ্রেম মাত্র, ছবি নহে। এই বিদেশী রাজাদের কীর্তি-কাহিনীর সংশ্রবে মারাঠা ও শিখের যেটুকু ইতিহাস আমাদের ছাত্রের পড়িতে পায় তাহা অতি অকিঞ্চিৎকর। অথচ আধুনিক ভারতবর্ষের কেবল এই অংশমাত্রেই দেশের লোকের ইতিহাস বলিতে যদি কিছু থাকে তাহা আছে।

 প্রায়ই জাতীয় অভ্যুত্থানের মূলে এক বা একাধিক মহাপুরুষ আমরা দেখিতে পাই। কিন্তু এ কথা মনে রাখিতে হইবে, সেই-সকল মহাপুরুষ আপন শক্তিকে প্রকাশ করিতেই পারিতেন না, যদি দেশের মধ্যে মহৎ ভাবের ব্যাপ্তি না হইত। চারি দিকে আয়োজন অনেক দিন হইতেই হয়;

৫৮