পাতা:ইতিহাস - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৩

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

শিবাজী ও মারাঠা জাতি

সেই আয়োজনে ছোটো বড়ো অনেকেরও যোগ থাকে। অবশেষে শক্তিশালী লোক উঠিয়া সেই আয়োজনকে ব্যবহারে প্রয়োগ করেন।

 মারাঠার ইতিহাসে আমরা শিবাজীকেই বড়ো করিয়া দেখিতে পাই। কিন্তু শিবাজী বড় হইয়া উঠিতে পারিতেন না, যদি সমস্ত মারাঠা জাতি তাঁহাকে বড়ো করিয়া না তুলিত। বহু দিন হইতে বহু ধর্মবীর দেশের উচ্চনীচের, ব্রাহ্মণ-শূদ্রের কৃত্রিম ব্যবধান ভেদ করিয়া পরস্পরের মধ্যে যোগসাধন করিতেছিলেন। ভক্তির রাজপথকে তাঁহারা ইতর ও বিশিষ্ট সকলেরই জন্য উন্মুক্ত করিয়া দিয়াছিলেন। এক ভগবানের অধিকারে তাহারা দেশের সকলকে সমান গৌরবের অধিকারী করিয়াছিলেন। মারাঠায় ধর্মান্দোলনে দেশের সমস্ত লোক একত্র মথিত হইতেছিল। শিবাজীর প্রতিভা সেই মন্থন হইতে উদ্ভূত হইয়াছে। তাহা সমস্ত দেশের ধর্মোদ্বোধনের সহিত জড়িত, এইজন্যই দেশের শক্তিতে তিনি ধন্য ও তাহার শক্তিতে দেশ ধন্য হইয়াছে।

 যদি এ কথা সত্য হইত যে, শিবাজী প্রতিভাশালী দস্যু মাত্র, তিনি নিজের স্বার্থসাধন ও ক্ষমতাবিস্তারের জন্য অসামান্য কৌশল প্রয়োগ করিয়াছিলেন, তবে তাহার সেই দস্যুতাকে অবলম্বন করিয়া কখনোই সমস্ত মারাঠা জাতি এক হইয়া উঠিত না। বিশেষত, শিবাজী যখন অওরঙ্গজেবের জালে জড়িত হইয়া বন্দী হইয়াছিলেন এবং দীর্ঘকাল তাঁহাকে রাজ্য হইতে দূরে যাপন করিতে হইয়াছিল তখনও যে তাহার কীতি ভাঙিয়া ভূমিসাৎ হয় নাই তাহার একমাত্র কারণ, সমস্ত দেশের ধর্মবুদ্ধির সহিত তাহার চেষ্টার যোগ ছিল। বস্তুত, তাঁহার সাধনা সমস্ত দেশেরই ধর্মসাধনার একটি বিশেষ প্রকাশ। এই ধর্মসাধনার আহ্বানেই খণ্ড খণ্ড মারাঠা আপনার বিচ্ছিন্ন শক্তিকে একত্র সম্মিলিত করিয়া মঙ্গল-উদ্দেশ্যের

৫৯