পাতা:ইতিহাস - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৬

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

ইতিহাস

হইতে রক্ষা করাই তাহাদের প্রধান চেষ্টা হইল। এইরূপে বাহির হইতে 'চাপ পাইয়াই শিখ একটি ঘনিষ্ঠ জাতি হইয়া দাঁড়াইল।

 শিখদের যিনি শেষ গুরু ছিলেন এই কাজেই তিনি বিশেষভাবে লাগিলেন। সর্বমানবের মধ্যে ধর্মপ্রচার কার্যকে সংহৃত করিয়া লইয়া শিখদিগকে বলিষ্ঠ করিয়া তোলাই তাঁহার জীবনের ব্রত ছিল।

 এ কাজ প্রকৃতপক্ষে ধর্মপ্রচারকের নহে; ইহা প্রধানত সেনানায়ক এবং রাজনীতিজ্ঞের কাজ। গুরু গোবিন্দের মধ্যে সেই গুণ ছিল। তিনি অসাধারণ অধ্যবসায়ে দল বাধিয়া তুলিয়া বৈরনির্যাতনের উপযুক্ত যোদ্ধা ছিলেন। তিনিই ধর্মসম্প্রদায়কে বৃহং সৈন্যদলে পরিণত করিলেন এবং ধর্মপ্রচারক গুরুর আসনকে শূন্য করিয়া দিলেন।

 গুরু নানক যে মুক্তির উপলব্ধিকে সকলের চেয়ে বড়ো করিয়া জানিয়াছিলেন, গুরু গোবিন্দ তাহার প্রতি লক্ষ স্থির রাখিতে পারেন নাই। শহস্ত হইতে মুক্তিকামনাকেই তিনি তাহার শিষ্যদের মনে একান্তভাবে মুদ্রিত করিয়া দিলেন।

 ইহাতে ক্ষণকালের জন্য ইতিহাসে শিখদের পরাক্রম উজ্জ্বল হইয়াছিল সন্দেহ নাই, ইহাতে তাহাদিগকে রণনৈপুণ্য দান করিয়াছে তাহাও সত্য, কিন্তু বাবা নানক যে পাথেয় দিয়া তাহাদিগকে একটি উদার পথে প্রেরণ করিয়াছিলেন সেই পাথেয় তাহারা এইখানেই খরচ করিয়া ফেলিল এবং তাহাদের যাত্রাও তাহারা এইখানেই অবসান করিয়া দিল।

 ইহার পর হইতে কেবল লড়াই এবং রাষ্ট্রবিস্তারের ইতিহাস। এ দিকে মোগল শক্তিও ক্ষীণ হইয়া আসিতেছিল এবং শিখদল তাহাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে যতই কৃতকার্য হইতে লাগিল ততই আত্মরক্ষার চেষ্টা ঘুচিয়া গিয়া ক্ষমতাবিস্তারের লোলুপতা বাড়িয়া উঠিতে লাগিল।

৬২