পাতা:ইতিহাস - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৮

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

ইতিহাস

স্বার্থপুষ্টির জন্যই সমস্ত শিখকে ছলে-বলে-কৌশলে নিবিড় করিয়া বাঁধিয়াছিলেন।

 শিখ সম্প্রদায়ের চিত্তে তিনি এমন কোনো মহৎ ভাবের সঞ্চার করেন নাই যাহাতে তাঁহার অবর্তমানেও তাহাদিগকে একত্র ধারণ করিয়া রাখিতে পারে। কেবলমাত্র অপ্রতিহত চাতুরী-প্রভাব এবং স্বার্থসাধন সম্বন্ধে সতর্ক অধ্যবসায়ের দৃষ্টান্ত তিনি দেখাইয়াছিলেন।

 তাঁহার লোভের সীমা ছিল না এবং তাহার ভোগস্পৃহা অসংযত ছিল। একটিমাত্র তাঁহার প্রশংসার বিষয় এই যে, তিনি যাহা চাহিয়াছিলেন তাহা পাইয়াছিলেন, কিছুতেই তাহাকে ঠেকাইতে পারে নাই। একটিমাত্র স্থানে তিনি আপনার দুর্দম ইচ্ছাকে সংযত করিয়াছিলেন– অত্যন্ত লুব্ধ হইয়াও ভারত-মানচিত্রে তিনি ইংরাজের রক্তগণ্ডীকে লঙ্ঘন করেন নাই, তাঁহার স্বার্থবুদ্ধি এইখানে তাঁহাকে টানিয়া রাখিয়াছিল।

 যাহা হউক, তিনি কৃতকার্য হইয়াছিলেন। কৃতকার্যতার দৃষ্টান্ত মানুষকে যত বিপদে ফেলিয়াছে এমন আর কিছুতেই না। এই দৃষ্টান্তে মানুষের মঙ্গলবুদ্ধিকে পরাস্ত এবং তাহার লুব্ধ প্রবৃত্তিকে অশান্ত করিয়া তোলে— ইহা অপঘাত মৃত্যুরই পথ।

 যাহা হইতে শিখ সম্প্রদায় আরম্ভ হইয়াছিল সেই নানক অকৃতকার্যতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এইজন্য তিনি তাহার বণিকপিতার কাছে যথেষ্ট লাঞ্ছনা ভোগ করিয়াছিলেন। লবণের কারবারে নানক কিরূপ লাভ করিয়াছিলেন সে কথা সকলেরই জানা আছে। তিনি দরিদ্র ছিলেন, কিন্তু যে শক্তিতে জাঠ কৃষকেরা প্রাণকে তুচ্ছ করিয়া দুঃখকে অবজ্ঞা করিয়া বড়ো হইয়া উঠিয়াছিল সে শক্তি এই কাণ্ডজ্ঞানহীন অকিঞ্চন তাপসই সঞ্চার করিয়াছিলেন।

৬৪