পাতা:ইতিহাস - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭১

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

শিবাজী ও গুরু গােবিন্দসিংহ

 শিখ-ইতিহাসের পরিণাম আমার কাছে অত্যন্ত শোকাবহ ঠেকে। যে নদী সমুদ্রে যাইবে বলিয়া অভ্রভেদী পর্বতের পবিত্র শুভ্রশিখর হইতে নিঃসৃত হইয়াছিল সে যখন পথের মধ্যে বালুকারাশির অভ্যন্তরে লুপ্ত হইয়া তাহার গতি হারায়, তাহার গান ভুলিয়া যায়, তখন সেই ব্যর্থতা যেমন শোচনীয়, তেমনি ভক্তের হৃদয় হইতে যে শুভ্র নির্মল শক্তিধারা বিশ্বকে পবিত্র ও উর্বর করিতে বাহির হইয়াছিল আজ তাহা যখন সৈন্যের বারিকে রক্তবর্ণ পঙ্কের মধ্যে পরিশোষিত হইয়া গেল তখন মানুষ ইহার মধ্যে কোনো গৌরব বা আনন্দ অনুভব করিতে পারে না।

 এই শিখ-ইতিহাস একদিন প্রতিজিঘাংসা অথবা অন্য কোনো সংকীর্ণ অভিপ্রায়ের আকর্ষণে লক্ষ্যভ্রষ্ট হইয়া মানব-সফলতার ক্ষেত্র হইতে স্খলিত হইয়াছে, কিন্তু তাহা অপেক্ষা নিম্নতর যে জাতীয় সফলতার ক্ষেত্র সেখানেও কোনো গৌরবলাভ করিতে পারে নাই। রণজিৎসিংহ যে রাজ্য বাঁধিয়াছিলেন তাহা রণজিৎসিংহেরই রাজ্য, গোবিন্দসিংহ মোগলদের সঙ্গে যে সংগ্রাম করিয়াছিলেন তাহা কেবলমাত্র শিখ সম্প্রদায়েরই সংগ্রাম। নিজের শিষ্যদলের বাহিরে তিনি সংকল্পকে প্রসারিত করেন নাই।

 এইখানে মারাঠা-ইতিহাসের সঙ্গে শিখ-ইতিহাসের প্রভেদ লক্ষিত হয়। শিবাজী যে চেষ্টায় প্রবৃত্ত হইয়াছিলেন তাহা কোনো ক্ষুদ্র দলের মধ্যে আবদ্ধ ছিল না। তাহার প্রধান কারণ, তিনি যে হিন্দুজাতি ও হিন্দুধর্মকে মুসলমান-শাসন হইতে মুক্তিদান করিবার সংকল্প করিয়াছিলেন তাহা আয়তনে শিখ জাতি ও ধর্ম অপেক্ষা অনেক বেশি ব্যাপক, সুতরাং সমগ্র ভারতের ইতিহাসকেই নূতন করিয়া গড়িয়া তোলাই তাহার লক্ষের বিষয় ছিল ইহাতে সন্দেহ নাই।

 গুরু গোবিন্দ এবং শিবাজী উভয়েই প্রায় সমসাময়িক। তখন ৬৭

৬৭