পাতা:ইতিহাস - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭২

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

ইতিহাস

আকবরের উদার রাষ্ট্রনীতির অবসান হইয়াছিল এবং সেইজন্যই মোগলশাসন তখন ভারতবর্ষের অমুসলমান ধর্ম ও সমাজকে আত্মরক্ষায় জাগরূক করিয়া তুলিয়াছিল।

 বস্তুত তখন ভিতরে বাহিরে আঘাত পাইয়া সমস্ত ভারতবর্ষে নানা স্থানেই একটা যেন ধর্মচেষ্টার উদ্বোধন হইয়াছিল। হিন্দুধর্মসমাজে তখন যে-একটি জীবনচাঞ্চল্য ঘটিয়াছিল, বিশেষভাবে দাক্ষিণাত্যে তাহা নানা সাধুভক্তকে আশ্রয় করিয়া নব নব ধর্মোৎসাহে প্রকাশ পাইয়াছিল। সেইরূপ সচেতন অবস্থায় ঔরঙ্গজেবের অত্যাচারে শিবাজীর ন্যায় বীরপুরুষ যে ভারতবর্ষে স্বধর্মকে জয়যুক্ত করিবার জন্য ব্রত গ্রহণ করিবেন, ইহা স্বাভাবিক।

 আবার ভারতবর্ষের পশ্চিমপ্রান্তে এই সময়ে নবভাবোদ্দীপ্ত শিখধর্মের প্রভাবে শিখ সম্প্রদায়ের চিত্ত ও প্রাণ পূর্ণ হইয়া উঠিয়াছিল। সেই কারণেই মোগল-শাসনের পীড়ন তাহাকে দমন করিতে পারে নাই, বরঞ্চ তাড়নাপ্রাপ্ত অগ্নির ন্যায় তাহাকে উদ্যত করিয়া তুলিয়াছিল।

 কিন্তু যদিচ ভিতরকার প্রভাব ও বাহিরের আঘাত উভয়েরই পক্ষে একইরকম ছিল, তথাপি তাহার ক্রিয়া গুরু গোবিন্দ এবং শিবাজীর মধ্যে এক ভাবে প্রকাশ পায় নাই।

 গুরু গোবিন্দ মোগলদের সঙ্গে অনেক লড়াই করিয়াছেন, কিন্তু তাহা কেমন খাপছাড়া-মতো। প্রতিহিংসা এবং আত্মরক্ষা -সাধনই তাহার মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল।

 কিন্তু শিবাজী যে-সকল যুদ্ধবিগ্রহে প্রবৃত্ত হইয়াছিলেন তাহা সোপানপরম্পরার মতো; তাহা রাগারাগি লড়ালড়ি মাত্র নহে। তাহা সমস্ত ভারতবর্ষকে এবং দূর কালকে লক্ষ্য করিয়া একটি বৃহৎ আয়োজন

৬৮