পাতা:ইতিহাস - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭৩

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

শিবাজী ও গুরু গােবিন্দসিংহ

বিস্তার করিতেছিল, তাহার মধ্যে একটি বিপুল আনুপূর্বিকতা ছিল। তাহা কোনো সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার প্রকাশ নহে, তাহা একটি বৃহৎ অভিপ্রায়সাধনের উদ্যোগ।

 কিন্তু তৎসত্ত্বেও দেখা যাইতেছে, শিখ ও মারাঠা উভয় জাতিরই ইতিহাস একই সময়ে একই প্রকার ব্যর্থতার মধ্যে সমাপ্ত হইয়াছে।

 ইহার কারণ কী? কারণ এই যে, যে উদ্দেশ্য সমস্ত দেশকে অধিকার করিতে চাহে তাহা কেবল একজন বা কয়েকজন মাত্র মনস্বী লোককে আশ্রয় করিয়া সফল হইতে পারে না। স্ফুলিঙ্গকে শিখা করিয়া তুলিতে হইলে কেবল প্রবল শক্তিতে চক্‌মকি ঠুকিলেই চলে না, উপযুক্ত পলিতারও আবশ্যক হয়। শিবাজীর চিত্ত সমস্ত দেশের লোকের সহিত আপনার যোগ স্থাপন করিতে পারে নাই। এইজন্য শিবাজীর অভিপ্রায় যাহাই থাক্‌-না, তাহার চেষ্টা সমস্ত দেশের চেষ্টারূপে জাগ্রত হইতে পারে নাই। এইজন্যই মারাঠার এই উদ্যোগ পরিণামে ভারতের অন্যান্য জাতির পক্ষে বগির উপদ্রব-রূপে নিদারুণ হইয়া উঠিয়াছিল।

 যে মঙ্গল সকলের তাহাকে সকলের চিত্তের মধ্যে যদি প্রতিষ্ঠিত না করা হয়, যদি তাহা কেবল আমার বা আমার দলের কয়েক জনের মধ্যেই বদ্ধ থাকে, তবে তাহার মঙ্গলরূপ ঘুচিয়া যায় এবং অন্যের পক্ষে ক্রমে তাহা উৎপাত হইয়া উঠে।

 শিবাজীর মনে যাহা বিশুদ্ধ ছিল, পেশওয়াদের মধ্যে তাহা ক্রমে ব্যক্তিগত স্বার্থপরতা-রূপে কলুষিত হইয়া উঠিল। এমন বিকার কদাচ ঘটিত না যদি এই ভাবটি দেশের সর্বসাধারণের মনে প্রসারিত হইবার পথ প্রশস্ত থাকিত। তাহা হইলে বৃহৎ আধারের মধ্যে বৃহৎ ভাব আপনার স্থান এবং খাদ্য পাইত; তাহা হইলে একটা কাঠ যখন নিবিবার

৬৯