পাতা:ইতিহাস - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭৫

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

শিবাজী ও গুরু গােবিন্দসিংহ

যাহা চিরকালের এবং সকল মানবের, যাহা ছোটো বড়ো সকলেরই অধিকারকে প্রশস্ত করে, চিত্তকে মুক্তি দেয় এবং যাহাকে স্বীকার করিলে প্রত্যেক মানুষই মনুষ্যত্বের পূর্ণতম গৌরবকে উপলব্ধি করে। নানকের এই উদার ধর্মের আহ্বানে বহু শতাব্দী ধরিয়া শিখ বহু দুঃখ সহ্য করিয়া ক্রমশ প্রসার লাভ করিতেছিল। এই ধর্মবোধ ও দুঃখভোগের গৌরবে শিখদের মধ্যে অলক্ষ্যে একটি মহৎ ঐক্যের ভিত্তি স্থাপিত হইয়াছিল।

 গুরু গোবিন্দ শিখদের এই ধর্মবোধের ঐক্যানুভূতিকে কর্মসাধনার সুযোগে পরিণত করিয়া তুলিলেন। তিনি একটি বিশেষ সাময়িক প্রয়োজনের প্রতি দৃষ্টি রাখিয়া ধর্মসমাজের ঐক্যকে রাষ্ট্রীয় উন্নতি-লাভের উপায়রূপে খর্ব করিলেন। কিন্তু এই উপলক্ষ্যে সম্প্রদায়কে সংকীর্ণ করিয়া লইয়া তিনি তাঁহার ঐক্যকে ঘনিষ্ঠ করিয়া লইলেন; যে জাতিভেদ তাহার প্রবল অন্তরায় ছিল তাহাকে সমূলে উৎপাটিত করিলেন।

 গুরু গোবিন্দ তাহার শিষ্যসমাজের মধ্য হইতে এই-যে ভেদবিভাগকে এক কথায় দূর করিতে পারিয়াছিলেন তাহার প্রধান কারণ এই যে, নানকের উদার ধর্মের প্রভাবে পরস্পরের মধ্যে ভেদবুদ্ধির ব্যবধান আপনিই তলে তলে ক্ষীণ হইয়া আসিয়াছিল। গুরু গোবিন্দ তাহাকে আঘাত করিবামাত্র তাহা শতখণ্ড হইয়া পড়িয়া গেল। পূর্ব হইতে গভীরতররূপে যদি ইহার আয়োজন না থাকিত তবে সহস্র প্রয়োজন হইলেও গুরু গোবিন্দ কিছুই করিতে পারিতেন না। শুধু তাই নয়, সকল কর্মনাশা এই ভেদকে দূর করিতে হইবে এই সংকল্পমাত্রও তাঁহার মনে আকার গ্রহণ করিতে পারিত না।

 কিন্তু গুরু গোবিন্দ কী করিলেন? ঐক্যকেই পাকা করিলেন, অথচ

৭১