পাতা:ইতিহাস - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭৬

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

ইতিহাস

যে মহাভাবের শক্তির সহায়তায় তাহা করা সম্ভব হইল তাহাকে সিংহাসনচ্যুত করিলেন, অন্তত তাহার সিংহাসনে আর-একজন প্রবল শরিক বসাইয়া দিলেন।

 ঐক্যই ভাবের বাহন। এই কারণে মহৎ ভাব মাত্রই সেই বাহনকে সৃষ্টি করিবার জন্য আপনার শক্তিকে নিযুক্ত করে! বাহনের গৌরব তাহার আরোহীর মাহাত্ম্যে। গুরু গোবিন্দ সাময়িক ক্রোধের উত্তেজনায় ও প্রয়োজন-বোধে বাহনকে প্রবল করিয়া তুলিলেন বটে, কিন্তু আরোহীকে খর্ব করিয়া দিলেন।

 তাহা হইতে ফল এই হইল, উপস্থিতমত কিছু কিছু কার্যসিদ্ধি ঘটিল, কিন্তু যাহা মুক্তির দিকে অগ্রসর হইতেছিল তাহা বন্ধনে পড়িল; শিখদের মধ্যে পরস্পরকে নিবিড় করিবার ব্যবস্থা রহিল, কিন্তু অগ্রসর করিয়া দিবার বেগ রহিল না। এইজন্য বহু শতাব্দী ধরিয়া যে শিখ পরম গৌরবে মানুষ হইবার দিকে চলিয়াছিল তাহারা হঠাৎ এক সময়ে থামিয়া সৈন্য হইয়া উঠিল— এবং ঐখানেই তাহাদের ইতিহাস শেষ হইয়া গেল।

 শিবাজী যে উদ্দেশ্য সাধনে তাহার জীবন প্রয়োগ করিয়াছিলেন তাহা কোনো সংকীর্ণ সাময়িক প্রয়োজন-মূলক ছিল না এবং পূর্ব হইতেই দাক্ষিণাত্যের ধর্মগুরুদের প্রভাবে তাহার ক্ষেত্র কতকটা প্রস্তুত হইয়াছিল। এইজন্য তাহার উৎসাহ কিছুকালের জন্য যেন সমস্ত মারাঠা জাতির মধ্যেই সঞ্চারিত হইতে পারিয়াছিল।

 ফুটা পাত্রে জল ভরিয়া উঠিতে পারে, কিন্তু তাহাতে জল থাকে না। ক্ষণকালের ভাবোচ্ছ্বাসের প্রাবল্যে মনে হয় সমস্ত বুঝি ছাপাইয়া এক হইয়া গেল, কিন্তু ছিদ্রের কাজ ভিতরে ভিতরে চলিতে থাকে। ভারতবর্ষের সমাজ ছিদ্রে পূর্ণ, কোনো ভাবকে তাহা ধরিয়া রাখিতে পারে না, এই-

৭২