পাতা:ইস্তাহার (বিশ্বজ্ঞান প্রকাশনী).pdf/৩৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মুক্তির নিমন্ত্রণ

গভীর রাত্তিরে আবছা কুয়াশার চাদরে ঢাকা
প্রাচীন কালের মসজিদের পেছনে ডালিম গাছে আলো ছড়িয়ে
সুগোল নরম চাঁদখানা যখন দেখা দিল,
তখন সহসা মনে পড়ল তোমার কথা, কমল।
উত্তর দিগন্ত থেকে হালকা হাওয়া এল,
ঝিঝি পোকার ডাকও ক্ষীণতর হল,
সবুজ ঘাসের বুক থেকে বিষণ্ণতার প্রলেপ তখন মুছে গেছে।
হাসপাতালের তের নম্বর বেডে তুমি হয়ত যথারীতি
রিক্ত রাত্রির তিক্ততা বুকে নিয়ে অবচেতন মনে ঘুমিয়ে রয়েছ।

গলির মোড়ে তোমার ইদানীংকালের বাসস্থান। হাসপাতাল।
জানালা খুললেই চোখে পড়ে গেটের দু'পাশের দুটো বড় আলো
মহান মৃত্যুর সঙ্গে তোমার বদ্ধ ঘরের বৈদুতিক আলোর আভা
অহেতুক যেন মিশতে চায়। ভাবছি তোমার কথা।

বিশ্বজোড়া চাঁদের আলোর অগ্নিকুণ্ডে যে মহান প্রাণের যজ্ঞ,
তার হোমের আগুনেই তুমি হয়ত আহুতি দিতে চলেছ
তোমার সারা যৌবনের সব গৌরবের মণিরত্নকে!
তোমার চোখ দুটো ছলছল, কণ্ঠ রুদ্ধ। আতঙ্কিত। করুণ।

এই মমতাহীন পৃথিবীকে এতদিন পরে চিরতরে ছেড়ে যেতে
তোমার খুব কষ্ট হয়, কমল। তা আমি জানি।
কিন্তু আমি হলে, মৃত্যুকেই মেনে নিতাম! হ্যাঁ, ঠিকই বলছি!
জন্ম নেবার সঙ্কল্প নিতাম এমন কোন অভিশাপহীন দেশে,
যেখানে মানুষে মানুষে নেই ভেদ, ভাইয়ে ভাইয়ে নেই ক্ষেদ,
শিশুরা যে দেশে আণবিক বোমা নিয়ে খেলা করে না,
অথবা সভ্যতার দাবিতে জল ঘোলা করতে ভয় পায়।
আমি ফিরে পেতে চাই দেশলাইয়ের বদলে চকমকি,
লেখার বদলে হিজিবিজি, কথার বদলে অদ্ভূত সাঙ্কেতিক স্বর।

৪১