পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/১০০৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১০০৬
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

ধ্যানের সময় আসিয়া তাহার শরীরে বাহিয়া উঠিত, কিন্তু কখনো কোনো অনিষ্ট করিত না।

 সকলের চাইতে বানরগুলি তাহাকে বেশি করিয়া ভালোবাসিত। আকারও তাহার নিকট কম করিত না। তাহার গায়ে হাত দিয়া তাহাকে ঠেলিয়া টিপিয়া নানা উপায়ে তাহার নিকট হইতে খাবার তো আদায় করিতই; খাবার জিনিস মনঃপুত না হইলে আবার আঁচড়াইয়া তাহাকে সাজাও দিত। তিনি ইহাতে রাগ করা দূরে থাকুক, বরং হাসিয়া বলিতেন, “ওহে, কি দিয়াছ, উহার পছন্দ হয় নাই; ভালো জিনিস দাও!

 বানরগুলি তাহার নিকট ছানা রাখিয়া নিশ্চিন্ত মনে অন্য কাজে মন দিত, কিছুমাত্র সন্দেহ করিত না। একদিন গোস্বামী মহাশয়ের পরিচিত একটা বানর তাহার বানরীকে লইয়া উপস্থিত হইল। বানরী কখনো সেখানে আসে নাই, কাজেই তাহার সংকোচ হওয়া স্বাভাকি। তাই সে দরজা অবধি আসিয়া আর কাছে আসিতে চাহিল না। বানরটা আগে নানান উপায়ে তাহাকে উৎসাহ দিল। তবুও যখন সে আসিল না, তখন বানর গোস্বামী মহাশয়ের কাছে আসিয়া তাহার হাতখানি টানিয়া নিজের হাতের ভিতরে লইয়া বানরীর দিকে চাহিয়া রহিল, যেন তাহাকে এই কথা জানাইল যে “দেখ, এ বড় ভালোমানুষ, কিছু করে না। ইহার পর বারী আর কাছে আসিতে কোনো আপত্তি করিল না।

 গোস্বামী মহাশয় এইসকল বানরকে বুড়ো দাদা, কালী, লেজকাটি ইত্যাদি নামে ডাকিতেন। ইহাদের অনেকে নাকি এখনো পুরীর লোকনাথের মন্দিরের কাছে বাস করে। এ কথা শুনিয়া একদিন লোকনাথের মন্দিরের ফটো তুলিতে গেলাম। মন্দিরের আঙ্গিনায় অনেক বানরও গতি ছিল। কিন্তু উহাদের ছবি তোলা আমাদের ঘটিল না। একজন পাণ্ডা আসিয়া জিজ্ঞাসা করিল, “তোমাদের সঙ্গে কি চামড়া আছে?’আমরা বলিলাম, আমাদের ক্যামেরায় চামড়া আছে। তাহা শুনিয়া সে ব্যক্তি বলিল, ‘তবে শীঘ্র বাহিরে যাও, এখানে চামড়া আনিতে নাই। কাজেই আমরা বাহিরে চলিয়া আসিলাম।

 যাই হউক, আমরা একেবারে শুধু হাতে ফিরিয়া আসিতে রাজি ছিলাম না। মন্দিরের আঙ্গিনার বাহিরে বাগান, সেইখানেই যত বানর থাকে। সুতরাং আমরা পুকুরের ধারে কলা ছড়াইয়া বানরের দলকে নিমন্ত্রণ করিলাম। একজন চ্যাঁচাইয়া ডাকিতে লাগিল, আয়, আয়, আয়। অমনি কয়েকটি বানর আসিয়া উপস্থিত হইল। আমরাও তাহাদের ছবি লইয়া বাড়ি ফিরিলাম। ইহাদের মধ্যে কাণী’ ‘লেজকাটি’ প্রভৃতির কেহ আছে কিনা জানি না।

 আগেই লোকনাথের মন্দিরের নিকট বানরের ছবি তোলার কথা বলেছি। দুঃখের বিষয়, সেবারের ছবিটির নীচে নরেন্দ্র সরোবরের নাম লেখা হইয়া গিয়াছে। আমার কিন্তু দোষ নাই, ও নাম উহাতে কি করিয়া লেখা হইল, তাহা আমি জানি না।

 যাই হক, কথাটা যদি উঠিল, তবে না হয়, নরেন্দ্র সরোবরের ছবিটাও দেওয়া যাউক। পুরীতে এই পুকুরটি অতিশয় প্রসিদ্ধ। আর ছবি দেখিলে বুঝিতে পারিবে, যে উহা যেমন তো পুকুর নহে। কলিকাতার লালদীঘি হইতে উহা অনেক বড়, আর তার চারিধার পাথর দিয়া বাধানো, জল বেশ পরিষ্কার, কিন্তু তাতে কুমির থাকায় নামিয়া স্নান করাটা তো নিরাপদ নহে। প্রত্যহ অনেক লোক ইহাতে স্নান করে বটে, কিন্তু ইহাদের দু-একটিকে