পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/১০৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১০৬
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

তাঁহার মা না হইলে হয়ত তিনি তাহাকে মারিয়াই ফেলিতেন।

 ভরত বলিলেন, ‘দাদা যদি তোমাকে এত মান্য না করিতেন, তাহা হইলে আমি তোমাকে এখনই তাড়াইয়া দিতাম! তুমি রাজার মেয়ে, আর তোমার এই কাজ! যাহা হউক, তুমি যাহা করিয়াছ তাহা আমি কখনই হইতে দিব না। আমি এখনই দাদাকে ফিরাইয়া আনিতে যাইতেছি। তোমার মত দুষ্ট স্ত্রীলোক আর এই পৃথিবীতে নাই! তুমি কেন আগুনে পুড়িয়া, না হয় গলায় দড়ি দিয়া মর না? না হয় বনেই চলিয়া যাও না?’

 তারপর ভরত সকলকে ডাকিয়া বলিলেন, “আমি রাজ্য চাহি না। দাদার রাজা আমি কেন লইব? আমি মামার বাড়ি গিয়াছিলাম, ইহার মধ্যে মা এত কাণ্ড করিয়া বসিয়াছেন, আমি ইহার কিছুই জানি না। এই বলিয়া তিনি শত্রুঘ্নকে লইয়া কৌশল্যার সঙ্গে দেখা করিতে চইলেন। কৌশল্যাও ভরতের গলা শুনিতে পাইয়া তাঁহার নিকটেই আসিতেছিলেন। পথে দুইজনের দেখা হইল। ভরতকে দেখিয়া কৌশল্যা বলিলেন, বাবা, এখন তুমি তো রাজ্য পাইয়াছ, তুমি সুখে থাক। আর এই দুঃখিনীকে রামের নিকট পাঠাইয়া দাও। এই কথায় ভরত কৌশল্যার পা জড়াইয়া কাঁদিতে কাঁদিতে অজ্ঞান হইয়া গেলেন। তখন কৌশল্যাও তাহাকে কোলে লইয়া কাঁদিতে লাগিলেন। তিনি বুঝিতে পারিলেন যে ভরতের কোন দোষ নাই।

 দশরথ তখনও সেই কড়ার মধ্যে তৈলের ভিতরে আছেন। তাহাকে পোড়াইতে আর বিলম্ব করা যায় না। সুতরাং পরদিন বশিষ্ঠ অনেক কষ্টে ভরতকে একটু শান্ত করিয়া সেই কাজের চেষ্টা দেখিতে লাগিলেন। ক্রমে দশরথকে পোড়ানো আর তাহার শ্রাদ্ধ দি সকলই হইয়া গেল।

 ইহার পর একদিন ভরত আর শত্রুঘ্ন কথাবার্তা বলিতেছেন, এমন সময় কুঁজী ভারি সাজগোজ করিয়া সখীদিগের সহিত সেখানে আসিয়া উপস্থিত। গহনা পরিয়া, চন্দন মাখিয়া, তাহার মুখে হাসি আর ধরে না! বোধ হয় মনে ভাবিয়ছিল যে খুব বড়রকমের একটা কিছু পুরস্কার পাইবে। পুরস্কারটি কী হইল, বলি শুন।

 ‘এই হতভাগীই সকল অনিষ্টের গোড়া! এখন ইহাকে যাহা করিতে হয় কর।’ শত্রুঘ্নও পাপিষ্ঠাকে মাটিতে আছড়াইয়া ফেলিয়া বেশ ভালমতই তাহাকে পুরস্কার দিতে আরম্ভ করিলেন। সখীরা তো ভয়ে দে ছুট। তখন ভরত বলিলেন, ‘ভাই, ওটাকে মারিয়া ফেলিও না। স্ত্রীলোককে মারিয়াছ শুনিলে দাদা রাগ করবেন। সুতরাং শক্রয় কুঁজীকে ছাড়িয়া দিলেন; কুঁজীও পলাইয়া বঁচিল।

 এইরূপ করিয়া দশরথের মৃত্যুর পর তের দিন গেল। তখন একজন রাজা না হইলে কাজই চলিতেছে না। সুতরাং সকলেরই ইচ্ছা এখন ভরত রাজা হন। কিন্তু ভরত বলিলেন, ‘চল, দাদাকে লইয়া আসি। দাদাই রাজা হইবেন, আর আমি চৌদ্দ বৎসর বনে গিয়া থাকিব। তখন সকলে মিলিয়া মহা আনন্দে ভরত শক্রয়ের সঙ্গে রামকে ফিরাইয়া আনিতে চলিল। কৌশল্যা,কৈকেয়ী, সুমিত্রা হইতে আরম্ভ করিয়া, মন্ত্রী, পুরোহিত, চাকরবাকর, সিপাহী, সৈন্য, সকলেই চলিল। অযোধ্যার লোক কেহই পড়িয়া থাকিল না। রথে চড়িয়া, হাতি চড়িয়া, ঘোড়া গাধা উটে চড়িয়া, না হয় হঁটিয়া, যে যেমন করিয়া পারিয়াছে সেইরূপ করিয়াই চলিয়াছে। এক লক্ষ ঘোড়সোয়ার, নয় হাজার হাতি, যাট হাজার রথ, তাহা ছাড়া সিপাহী সাস্ত্রী আর লোকজন