পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/১০৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ছেলেদের রামায়ণ
১০৯

জাবালি নামক আর একজন পুরোহিত তাঁহার সহিত রীতিমত তর্কই জুড়িয়াছিলেন। কিন্তু শেষে সকলকেই তাঁহার নিকট হার মানিতে হইল।

 তখন ভরত বলিলেন, ‘দাদা, যদি নিতান্তই না যাইবে, তবে তোমার পায়ের খড়ম দুখানি আমাকে খুলিয়া দাও। এখন হইতে এই খড়মই আমাদের রাজা। আমরা ইহার চাকর। তোমার এই খড়ম লইয়া চৌদ্দ বৎসর তোমার মত গাছের ছাল পরিয়া, ফলমূল খাইয়া, অযোধ্যার বাহিরে তোমার জন্য অপেক্ষা করিব। তাহার পরের বৎসরের প্রথম দিনে যদি তুমি ফিরিয়া না আইস, তবে আগুনে পুড়িয়া মরিব!’

 রাম ভরতকে খড়ম দিয়া বলিলেন অবশ্য ফিরিব। ভাই, আমার মাকে দেখিও।’ এই বলিয়া রাম ভরতকে বিদায় দিলেন। তারপর ভরত সেই খড়মকে হাতির উপর চড়াইয়া অযোধ্যায় লইয়া আসিলেন। সেখানে রাণীদিগকে রাখিয়া তিনি মন্ত্রী আর পুরোহিতদিগকে বলিলেন, ‘দাদা যতদিন না আসেন, ততদিন আর অযোধ্যায় থাকিতে পারিব না। চলুন আমরা নন্দীগ্রামে যাই।’

 নন্দীগ্রাম অযোধ্যার কাছেই। ভরত সেখানে গিয়া রামের খড়মকে সিংহাসনের উপর রাখিলেন। নিজে গাছের ছাল পরিয়া সেই খড়মের উপর ছাতা ধরিতেন, চামরের বাতাস করিতেন। রাজ্যের কোন কাজ আরম্ভ হইলে আগে খড়মের কাছে না বলিয়া কিছুই করিতেন না।

 ভরত চলিয়া আসিলে পর রামের আর চিত্রকূটের কাছে থাকিতে ইচ্ছা হইল না। তাই তিনি সীতা আর লক্ষ্মণকে লইয়া সেখান হইতে অত্রি মুনির আশ্রমে চলিয়া গেলেন।

 অত্রি আর তাঁহার স্ত্রী অনসূয়া দেবীর গুণের কথা কী বলিব! এমন ধার্মিক লোক অতি অল্পই দেখা যায়। তাঁহারা যে কত কাল যাবৎ তপস্যা করিতেছেন তাহা কেহ জানে না। অনসূয়া দেবী যার-পর-নাই বুড়া হইয়াছেন; তেমন বুড়া মানুষ রাম দেখেন নাই। সীতাকে অনসূয়া দেবীর এতই ভাল লাগিল যে, তিনি তাঁহাকে বর দিবার জন্য ব্যস্ত হইয়া উঠিলেন। সীতা বলিলেন, ‘মা, আপনি যে সন্তুষ্ট হইয়াছেন, ইহাই আমার পরম সৌভাগ্য। ইহার পর আবার বর লইয়া কী হইবে?’

 কিন্তু অনসূয়া কি তাহাতে ভোলেন? আর কিছু না হউক, একখানি পোশাক, কতকগুলি অলঙ্কার, একছড়া মালা, আর গায়ে মাখিবার খানিকটা অঙ্গরাগ তিনি সীতাকে না দিয়া ছড়িলেনই না। এইসকল জিনিস যে খুব সুন্দর ছিল, সে বিষয়ে তো কিছু সন্দেহই নাই; তাহা ছাড়া ইহাদের একটি আশ্চর্য গুণ এই ছিল যে, ইহারা কোন কালেও ময়লা হইত না।

 এইরূপ আদরযত্নে অত্রি মুনির আশ্রমে এক রাত্রি থাকিয়া পরদিন সীতা ও লক্ষ্মণের সঙ্গে রাম অন্য একটি বনে চলিয়া গেলেন। সে বনের নাম দণ্ডক বন।