পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/১১০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১১০
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

অরণ্যকাণ্ড

 শুক বনে অনেক মুনির আশ্রম ছিল। সেই সকল আশ্রমের মধ্যে এক রাত্রি থাকিয়া রাম সেখান হইতে আরও গভীর বনে প্রবেশ করিলেন। বনবাসে আসিয়া অবধি এতদিনে তাঁহারা কোন রাক্ষস দেখিতে পান নাই। এইবার বেশ জমকালো রকমের একটা রাক্ষস তাঁহাদের সামনে পড়িল। বনের ভিতর সে দাঁড়াইয়া আছে, যেন একটা পাহাড়! চেহারার কথা আর কী বলিব। যেমন বিষম ভুঁড়ি, তেমনি বিদঘুটে হাঁ! তাহার উপর আবার গর্তপানা দুটো চোখ, গণ্ডারের চামড়ার মত চামড়া, আর পরনে রক্ত-চর্বি-মাখা বাঘছাল।

রাক্ষস মহাশয়ের তখন জলখাবার খাওয়া হইতেছিল। খাওয়ার আয়োজন বেশি নয়—গোটা তিনেক সিংহ, চারিটা বাঘ, দুটা গণ্ডার, দশটা হরিণ, আর একটা হাতির মাথা!

সে জলযোগে কাহারও কোন আপত্তি ছিল না, যদি হতভাগা সীতাকে লইয়া ছুট না দিত। সীতাকে লইয়া যাইতে দেখিয়া রাম ‘হায় হায়!’ করিয়া কাঁদিতে লাগিলেন। কিন্তু লক্ষ্মণ বলিলেন, ‘দাদা, তুমি এত বড় বীর, তুমি কেন এমন করিয়া কাঁদিতেছ? এই দেখ, আমি রাক্ষস মারিয়া দিতেছি।’

তাহা শুনিয়া রাক্ষস বলিল, ‘তোরা কে রে?’ রাম বলিলেন, ‘আমরা ক্ষত্রিয়। তুই কে?’ রাক্ষস বলিল, ‘আমার নাম বিরাধ; ব্রহ্মা বলিয়াছেন যে, অস্ত্র দিয়া কেহই আমাকে মারিতে পারিবে না। তোরা শীঘ্র পালা!’

একথা শুনিয়া রাম বিরাধের গায়ে সাত বাণ মারিলেন। তখন সে সীতাকে ফেলিয়া, শূল হাতে বিকট শব্দে, হাঁ করিয়া রাম লক্ষ্মণকে খাইতে আসিল। রাম লক্ষ্মণ যত বাণ মারেন, ব্রহ্মার বরে, তাহাতে তাহার কিছুই হয় না; সে গা-ঝাড়া দিয়া সব ফেলিয়া দেয়। এমন সময় রামের দুই বাণে তাহার শূলটা কাটা গেল। তারপরে দুই জনে খড়্গ লইয়া যেই তাহাকে আক্রমণ করিয়াছেন, অমনি সে দুজনকে কাঁধে ফেলিয়া দে ছুট।

তখন সীতা ভয়ানক কাঁদিতে কাঁদিতে বলিলেন, ‘ওগো রাক্ষস, তুমি ইহাদিগকে ছাড়িয়া আমাকে খাও!’ যাহা হউক, রাক্ষসের কাহাকেও খাইবার দরকার হইল না। কারণ, রাম লক্ষ্মণ তখনই তাহার দুই হাত ভাঙিয়া দিলেন, আর তাহাতে সে ‘ভেউ ভেউ’ করিতে করিতে অজ্ঞান হইয়া পড়িয়া গেল।

কিন্তু কী মুস্কিল! আপদ কিছুতেই মরিতে চায় না। দুইজনে তাহাকে কিল, লাথি, আছাড়, কত মারিলেন, মাটিতে ফেলিয়া থেতলা করিয়া দিলেন, খড়্গ গিয়া কাটিতে গেলেন, কিছুতেই তাহার মরণ নাই। তখন রাম বলিলেন, ‘দেখ লক্ষ্মণ, এটা অস্ত্রে মরিবে না; চল এটাকে মাটিতে