পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/১১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১১২
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

কোন ব্রাহ্মণকে দেখিতে পাইলেই বলিত, ‘আমার বাড়িতে শ্রাদ্ধ, আপনার নিমন্ত্রণ।’ শ্রাদ্ধের কথা একেবারেই মিথ্যা; আসলে ফাঁকি দিয়া ব্রাহ্মণ বেচারাকে নিজের বাড়িতে আনা চাই।

 দুরাত্মা, সেই ব্রাহ্মণকে ফাঁকি দিয়া আনিয়া ভেড়া খাইতে দিত। সে আবার যে-সে ভেড়াও নয়, তাহার ভাই বাতাপি সেই ভেড়া সাজিত। সেই ভেড়ার মাংস রাঁধিয়া সে ব্রাহ্মণকে খাইতে দিত, আর খাওয়া হইলে ডাকিত, ‘বাতাপি, বাতাপি’! বাতাপি তখন ভেড়ার মত ‘ভ্যা ভ্যা’ করিতে করিতে বেচারা ব্রাহ্মণের পেট চিরিয়া বাহির হইত। এইরূপে তাহারা অনেক ব্রাহ্মণ মারিয়াছিল।

 এই দুই দৈত্যকে শাস্তি দিবার জন্য অগস্ত্য মুনি একবার তাহাদের বাড়িতে নিমন্ত্রণ খাইতে গেলেন। ইল্বল তাঁহাকেও সেইরকম করিয়া ভেড়া রাঁধিয়া খাওয়াইল। সে জানিত না যে, এই সর্বনেশে মুনি তাহার ভাইকে একেবারে হজম করিয়া ফেলিবেন! খাওয়া শেষে ইল্বল ডাকিল, ‘বাতাপি, বাতাপি!’ অগস্ত্য বলিলেন, ‘বাতাপি কোথা হইতে আসিবে? তাহাকে যে হজম করিয়া ফেলিয়াছি।’ তাহা শুনিয়া ইল্বল অগস্ত্যকে মারিতে গেল, কিন্তু অগস্ত্য কেবল তাহার দিকে রাগের ভরে তাকাইয়াই তাহাকে ভস্ম করিয়া ফেলিলেন।

 অগস্ত্য রামকে বিশ্বকর্মার তৈয়ারি একখানি ধনুক, ব্রহ্মদত্ত নামে একটা ভয়ঙ্কর বাণ, অক্ষয় তৃণ নামক একটি তুণ, আর একখানি আশ্চর্য খড়গ দিলেন। তৃণটির এমন আশ্চর্য গুণ ছিল যে, তাহার ভিতরকার তীর কিছুতেই ফুরাইত না;এইজন্য তাহার নাম অক্ষয় তুণ। রাম সেই জিনিসগুলি লইয়া অগস্ত্যকে বলিলেন, ‘মুনিঠাকুর, আমাদিগকে একটি সুন্দর জায়গা দেখাইয়া দিন, আমরা সেখানে ঘর বাঁধিয়া থাকিব।’ অগস্ত্য একটু চিন্তা করিয়া বলিলেন, ‘এখান হইতে দুই যোজন দূরে পঞ্চবটী নামে একটি অতি সুন্দর বন আছে। সেখানে সুন্দর ফলমূল, মিষ্ট জল, হরিণ, ময়ূর ইত্যাদি সকলই পাওয়া যায়। তোমরা সেইখানে গিয়া সুখে বাস কর।’ এ কথায় রাম অগস্ত্যকে প্রণাম করিয়া পঞ্চবটী যাত্রা করিলেন।

 খানিক দূরে গিয়া তাহারা দেখিলেন যে, পথের ধারে বিশাল এক পাখি বসিয়া আছে। তাহাকে রাক্ষস ভাবিয়া রাম লক্ষ্মণ জিজ্ঞাসা করিলেন, ‘তুমি কে হে?’ সে বলিল, ‘বাবা, আমি তোমাদের পিতার বন্ধু। আমার নাম জটায়ু। আমার দাদার নাম সম্পাতি, আমার পিতার নাম অরুণ। গরুড় আমাদিগের জ্যেঠামহাশয়।’

 পাখি আরও বলিল, ‘তোমরা আমার সঙ্গে এইখানে থাক, তাহা হইলে, তোমরা যখন ফল আনিতে যাইবে তখন আমি সীতাকে দেখিতে পারিব।’ রাম লক্ষ্মণ তাঁহাকে নমস্কার করিলেন। তাঁহার কথাবার্তা তাঁহাদের বড়ই মিষ্ট লাগিল।

 সে স্থানটি বাস্তবিকই খুব সুন্দর। কাছেই গোদাবরী নদী; তাহাতে হাঁস, সারস প্রভৃতি নানারকমের পাখি খেলা করিতেছে। দুইধারে সুন্দর পাহাড়গুলি ফুলে ফলে বোঝাই হইয়া আছে। নদীতে হরিণ জল খাইতে আসে, আর বনের ভিতর ময়ূর ডাকে। ঘর বাঁধিয়া থাকিবার পক্ষে স্থানটি চমৎকার। এই সুন্দর স্থানে লক্ষ্মণ একটি সুন্দর ঘর বাঁধিলেন।

 সেই ঘরটিতে তিনজনের বেশ সুখেই সময় কাটিতেছিল। কিন্তু সুখ কি চিরদিন থাকে? একদিন সূর্পণখা নামে একটা রাক্ষসী সেখানে আসিয়া উপস্থিত হইল। সে বলিল, ‘আমি রাবণ রাজার বোন, রামকে বিবাহ করিতে আসিয়াছি।’ রাম তাহাকে বিবাহ করিতে রাজি হইলেন না। তখন সে লক্ষ্মণকে বলিল, ‘তুমি আমাকে বিবাহ কর।’ লক্ষ্মণও রাজি হইলেন না। তাহাতে