কিষ্কিন্ধ্যাকাণ্ড
ম্পা নদী পার হইলে ঋষ্যমূক পর্বত। সেই ঋষ্যমূক পর্বতের নিকটে বানর দিগের রাজা সুগ্রীব আর কয়েকটি বানর সঙ্গে লইয়া বেড়াইতেছিল। বেড়াইতে বেড়াইতে সে দেখিল যে, দুইজন মানুষ সেই দিকে আসিতেছে।
এই দুইজন অবশ্য রাম ও লক্ষ্মণ ছাড়া আর কেহ নহেন। কিন্তু সুগ্রীবের মনে সর্বদাই বালীর ভয় লাগিয়া ছিল। বালী তাহাকে রাজ্য হইতে তাড়াইয়া দিয়াছে, আবার কখন হয়ত তাহার লোক আসিয়া তাহাকে মারিবে। এইজন্য রাম লক্ষ্মণকে দেখিয়াই সে ভাবিল, বুঝি তাঁহারাও বালীরই লোক। তাই সে সঙ্গের—বানরদিগকে ডাকিয়া বলিল, ‘সর্বনাশ হইয়াছে, এই দুজন নিশ্চয়ই বালীর লোক!’ এই কথা শুনিয়া অন্যান্য বানরদিগের মনেও ভারি ভয় হইল।
কিন্তু উহাদিগের মধ্যে হনুমান বলিয়া একজন ছিল, সে বলিল, ‘কিসের ভয়? বালী তো ঋষ্যমূক পর্বতে আসিতেই পারে না, আর ঐ লোকদুইটির সঙ্গেও তাহাকে দেখিতেছি না।’ তাহা শুনিয়া সুগ্রীব বলিল, ‘ও দুইজনকে দেখিয়া আমার বড়ই ভয় হইতেছে। উহারা বালীর লোক হইতেও পারে। হনুমান, তুমি একবার গিয়া জানিয়া আইস না, উহারা কিরূপ লোক, আর কেন এখানে আসিয়াছে!’
হনুমান তখন দাড়ি গোঁফ পরিয়া একটি ভিখারী সাজিল। তারপর রাম লক্ষ্মণের কাছে গিয়া মিষ্ট কথায় বিনয় করিয়া বলিতে লাগিল, মহাশয়, আপনারা কে? কী জন্যই বা এখানে আসিয়াছেন? আপনাদের দেখিলে যেমন তেমন লোক বলিয়া বোধ হয় না! এমন সুন্দর চেহারা, হাতে চমৎকার অস্ত্র, আর শরীরে বোধ হইতেছে যেন কতই জোর! এই ঋষ্যমূক পর্বতে বানরের রাজা সুগ্রীব থাকেন। তাঁহার ভ্রাতা বালী তাঁহাকে রাজ্য হইতে তাড়াইয়া দেওয়াতে তিনি মনের দুঃখে বনে বনে ঘুরিয়া বেড়াইতেছেন। সুগ্রীব খুব বীর, আর বড়ই ধার্মিক। তিনি আপনাদের সহিত বন্ধুতা করিতে চাহেন, এবং সেইজন্যই আপনাদের নিকট পাঠাইয়াছেন। আমি তাহার মন্ত্রী, আমার নাম হনুমান। আমি পবনের পুত্র, জাতিতে বানর।’
হনুমানের কথা শুনিয়া রাম লক্ষ্মণকে বলিলেন, ‘আমি সুগ্রীবকে খুঁজতেছি, এমন সময় তাহার মন্ত্রী আসিয়া উপস্থিত হইল। লোকটিকে অতিশয় বিদ্বান, বুদ্ধিমান আর বীর বলিয়া বোধ হইতেছে ইহার কথাগুলি কী মিষ্ট আর কেমন শুদ্ধ! এতক্ষণ কথা কহিল, তবুও একটা পাড়াগেয়ে কথা উহার মুখ দিয়া বাহির হইল না। লক্ষ্মণ, তুমি ইহার সঙ্গে কথাবার্তা বল।’
তখন লক্ষ্মণ বললেন, ‘আমরাও সুগ্রীবকে খুজিতেছি। আমরা অযোধ্যার রাজা দশরথের পুত্র। ইহার নাম রাম, আমার নাম লক্ষ্মণ। আমি ইহার ছোট ভাই সৎমার ছলনায় ইনি আমাকে
উপেন্দ্র—১৬