পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/১২২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১২২
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র



লইয়া বনে আসিয়াছেন। ইহার স্ত্রী সীতাদেবীও সঙ্গে আসিয়াছিলেন। কিন্তু কোন দুষ্ট রাক্ষস তাঁহাকে কোথায় লইয়া গিয়াছে, তাহার কিছুই জানি না। শুনিয়াছি তোমাদের রাজা সুগ্রীব খুব বুদ্ধিমান। হয়ত তিনি সেই রাক্ষসকে জানেন। তাই রাম তাঁহার সহিত বন্ধুতা করিতে আসিয়াছেন।’

 হনুমান বলিল, সুগ্রীব অবশ্যই ইহার সহিত বন্ধুতা করিবেন, আর বানরদিগকে লইয়া সীতাকে খুঁজিবার সাহায্য করবেন। বালীর ভয়ে তিনি বনে বনে ঘুরিয়া বেড়াইতেছেন, সুতরাং আপনাদের আসাতে তাঁহারও উপকার হইতে পারে।’

 তারপর হনুমান রাম লক্ষ্মণকে পিঠে করিয়া সুগ্রীবের নিকট লইয়া গেল। সুগ্রীব রামের পরিচয় পাইয়া বলিল, ‘রাম, তুমি পৃথিবীর মধ্যে সকলের বড় আর আমি বানর। তুমি আমার সহিত বন্ধুতা করিতে আসিয়াছ, আমার কী সৌভাগ্য! ‘

 তখনই হনুমান দুইখানি কাঠ ঘষিয়া আগুন জ্বালিল। সেই আগুনের সম্মুখে সুগ্রীব রামের সহিত কোলাকুলি করিয়া বলিল, “তুমি আমার বন্ধু হইলে। এখন হইতে তোমার যাহা ইচ্ছা, আমরাও তাহাই ইচ্ছা হইবে। যাহাতে তোমার সুখ হয়, তাহাতে আমারও সুখ হইবে, আর যাহতে তোমার দুঃখ হয়, তাহাতে আমারও দুঃখ হইবে। এইরূপে রাম আর সুগ্রীবের বন্ধুতা হইয়া গেল। তারপর তাঁহারা গাছের পাতার বিছানায় বসিয়া নিজ-নিজ সুখ-দুঃখের কথা কহিতে লাগিলেন।

 রাম বলিলেন, ‘বন্ধু, আমি বালীকে মারিয়া তোমার ভয় দূর করিব।” সুগ্রীব বলিল, বন্ধু, তুমি সাহায্য করিলে আমি যে আবার রাজ্য পাইব, তাহতে সন্দেহ কী? তোমার কষ্টও দূর করিয়া দিব। সীতা যেখানেই থাকুন, আমরা তাঁহাকে খুজিয়া বাহির করিবই করিব। কেহই তাঁহাকে লুকাইয়া রাখিতে পরিবে না। সেদিন এইখান দিয়া রাবণ একটি মেয়েকে লইয়া যাইতেছিল। বোধহয় তিনিই সীতা। তিনি তোমার নাম ধরিয়া কাঁদিতেছিলেন। আমাদিগকে দেখিতে পাইয়া গায়ের চাদর আর গহনা ফেলিয়া গেলেন। আমরা তাহা পর্বতের গুহায় লুকাইয়া রাখিয়াছি, দেখিলে হয়ত চিনিতে পরিবে।’

 এই বলিয়া সুগ্রীব সীতার সেই সকল অলঙ্কার আর কাপড় আনিয়া রামকে দেখাইল। সীতার গায়ের চাদর, তাঁহার দুইখানি নূপুর, তাঁহার কেয়ুর আর কুণ্ডল—এ সকল দেখিয়া রাম চিনিতে পারিলেন। তখন তাঁহার দুঃখ যেন আরও বাড়িয়া গেল। সুগ্রীব তাঁহাকে অনেক বুঝাইয়া বলিল, বন্ধু, দুঃখ করিও না। আমরা নিশ্চয়ই সীতাকে আনিয়া দিব।’ এইরূপে দুই বন্ধুতে দুজনার দুঃখ দূর করিবার জন্য প্রতিজ্ঞা করিলেন।

 তারপর সুগ্রীব আর বালীর ঝগড়ার কথা উঠিল। একটা অসুর ছিল, তাহার নাম মায়াবী। সে দুন্দুভি নামক দানবের বড় ছেলে। একবার বালীর সঙ্গে মায়াবীর যুদ্ধ হয়। তখন বালীর তাড়া খাইয়া সে একটা প্রকাণ্ড গর্তের ভিতরে গিয়া ঢোকে। বালীও সুগ্রীবকে সেই গর্তের মুখে রাখিয়া সেই অসুরের সঙ্গে সঙ্গে তাহার ভিতরে ঢুকিল।

 সুগ্রীব এক বৎসর সেই গর্তের মুখের কাছে বসিয়া রহিল কিন্তু বালী ফিরিল না। শেষে গর্তের ভিতর হইতে গরম রক্ত বাহির হইতে লাগিল, অসুরদিগের ভয়ানক গর্জন শোনা গেল। তাহাতে সুগ্রীব মনে করিল, বুঝি বালী মারা গিয়াছে। তখন সে অসুরের ভয়ে গর্তের মুখে এক প্রকাণ্ড পাথর চাপা দিয়া, কাঁদিতে কাঁদিতে কিষ্কিন্ধ্যায় ফিরিয়া আসিল। সেখানকার