পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/১২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ছেলেদের রামায়ণ
১২৩

লোকেরা বালী মরিয়াছে জানিয়া সুগ্রীবকে রাজা করিল।

 ইহার পর বালী ফিরিয়া আসিয়া দেখিল, সুগ্রীব রাজা হইয়াছে। তখন সে বলিল, আমি সুগ্রীবকে গর্তের মুখে রাখিয়া অসুর মারিতে গিয়াছিলাম। ইহার মধ্যে হতভাগা আমার রাজ্য লইবার ফন্দি করিয়া আমাকে পাথরচাপা দিয়া আসিয়াছে।’ এই বলিয়া সে সুগ্রীবকে অনেক কষ্ট দিয়া তাড়াইয়া দিল। তাহার কোন কথাই শুনিল না।

 তাহার পর হইতে সুগ্রীব বালীর ভয়ে ঋষ্যমূক পর্বতে আসিয়া বাস করিতেছে। মতঙ্গ মুনির শাপে বালী ঋষ্যমূক পর্বতে আসিতে পারে না। কাজেই সেখানে থাকিলে সুগ্রীবের ভয় অনেকটা কম থাকে।

 রাম বালীকে মারিবেন শুনিয়া সুগ্রীব খুব সন্তুষ্ট হইল। কিন্তু এ কাজ তিনি করিতে পরিবেন কি না, সে বিষয়ে তাহার মনে সন্দেহ ছিল। বালী যেমন তেমন বীর ছিল না। সকালে উঠিয়া সে চার সাগরের জল দিয়া আহ্নিক করিত পর্বতের চূড়া লইয়া গোলা খেলিত।

 দুন্দুভি নামে মহিষের চেহারাওয়ালা একটা অসুর ছিল। সে এমন প্রকাণ্ড ছিল, আর তাহার গায়ে এতই জোর ছিল যে, কেহই তাহার সঙ্গে যুদ্ধ করিতে সাহস পাইত না। দুন্দুভি সমুদ্রের সঙ্গে যুদ্ধ করিতে গেল;সমুদ্র হাতজোড় করিয়া বলিল, আমি পারিব না, হিমালয়ের কাছে যাও। হিমালয়েব কাছে গেলে হিমালয় বলিল, “আমি কি যুদ্ধ জানি? আমি অমনি হার মানিতেছি।’ তখন দুন্দুভি বলিল, তবে আমি কাহার সঙ্গে যুদ্ধ করিব শীঘ্র বল, নহিলে তোমাকে গুতাইয়া গুড়া করিব।’ হিমালয়ে বলিল, কিষ্কিন্ধ্যায় বানরের রাজা বালী থাকেন। তাহার কাছে যাও। তিনি তোমার সঙ্গে যুদ্ধ করিতে পরিবেন।’

গর্জন শুনিয়া বালী সেখানে আসিলে দুন্দুভি বলিল, “তোমার সঙ্গে যুদ্ধ করিব। তখন বালী দুই হাতে তাহার দুইটা শিং ছিঁড়িয়া ফেলিল। তারপর তাহার লেজ ধরিয়া তাহাকে মাটিতে খালি আছাড়ের পর আছড়—ঠিক যেমন করিয়া ধোপা কাপড় কাচে। এইরূপে সেটা মরিয়া গেলে পর তার লেজ ধরিয়াই ঘুরাইতে ঘুরাইতে তাহাকে একেবারে চার ক্রোশ দূরে ছুঁড়িয়া ফেলিয়া দিল। সেই সময় দুন্দুভির রক্ত মতঙ্গ মুনির আশ্রমে গিয়া পড়ে। তাহাতে সেই মুনি বালীকে এই বলিয়া শাপ দেন যে, সে সেখানে গেলেই মাথা ফাটিয়া যাইবে। মাথা ফাটিবার ভয়ে বালী আর সেখানে আসে না। দুন্দুভির হাড়গুলি তখনও ঋষ্যমূক পর্বতে পড়িয়া ছিল। সুগ্রীব রামকে তাহা দেখাইল। বালীর গায়ে কি যেমন-তেমন জোর ছিল! সাতটা বড় বড় শালগাছ একসঙ্গে ধরিয়া বালী তাহাতে এমনি নাড়া দিতে পারিত যে, সেইনাড়াতেই তাহদের সমস্ত পাতা ঝরিয়া পড়িত।

 কাজেই বালীকে সুগ্রীব এত ভয় করিত। আর সেইজন্যই রাম তাহাকে মারিতে পারবেন কি না, সে বিষয়ে তাহার সন্দেহ হইল। তাহার ভয় দেখিয়া লক্ষ্মণ জিজ্ঞাসা করিলেন, আচ্ছা, কী করিলে তোমার বিশ্বাস হইবে যে দাদা বালীকে মারিতে পারিবেন? সুগ্রীব বলিল, ঐ যে সাতটা তালগাছ দেখিতেছ, বালী তাহার এক একটাকে একেবারে এপিঠ ওপিঠ করিয়া ফুড়িয়া ফেলিতে পারেন। রাম যদি ঐ দুন্দুভির হাড় দুইশত ধনু দূরে ফেলিতে পারেন, আর বাণ মারিয়া একটা তালগাছ ফুটা করিতে পারেন, তবে বুঝিব তিনি বালীকে মারিতে পারবেন।’