পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/১২৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১২৪
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

 এই কথা শুনিয়া রাম হাসিতে হাসিতে পায়ের বুড়া আঙুল দিয়া দুন্দুভির সেই পাহাড়ের মত হাড়গুলিকে ঠেলিয়া দিলেন, আর সেগুলি একেবারে চল্লিশ ক্রোশ দূরে গিয়া পড়িল। কিন্তু তাহাতেও সুগ্রীবের সন্দেহ গেল না। সে বলিল, ‘এখন কিনা হাড়গুলি শুকাইয়া হাল্কা হইয়া গিয়াছে এখন তো এত দুরে ফেলিতে পরিবেই। বালী আস্ত মহিষটাকে ফেলিয়াছিলেন, সেটা তখন মাংস আর চর্বিতে ইহার চেয়ে কত ভারী ছিল! আচ্ছা, একটা তালগাছ ফুটা কর দেখি!’

 তাহা শুনিয়া রাম একটা বাণ মারিলেন। সে বাণ একেবারে সেই সাতটা তালগাছকে ফুড়িয়া, পাহাড়টাকে সুদ্ধ ফুঁড়িয়া পাতালে ঢুকিয়া গেল। পাতালে গিয়াও কিন্তু সে থামিল না, থামিল আসিয়া রামের তুণে। তখন সুগ্রীব তাড়াতাড়ি রামের পায়ের ধূলা লইতে পারিলে বাঁচে। সে বুঝিতে পারিল যে, ভাল করিয়া রামের এক বাণ খাইলে বালী নিশ্চয় মরিয়া যাইবে।

 তবে আর কিসের ভয়! এখন কিষ্কিন্ধ্যায় গিয়া বালীর সঙ্গে যুদ্ধ বাধাইতে পারিলেই কাজ হইবে। সুতরাং সকলে মিলিয়া কিষ্কিন্ধ্যায় আসিল।

 সেখানে আসিয়া সুগ্রীব কোমরে কাপড় জড়াইয়া, আকাশ ফাটাইয়া চিৎকার করিতে লাগিল, ‘কোথায় গেল দাদা? আইস দেখি, একবার যুদ্ধ করি!’ তাহা শুনিয়া রাগে বালীর রক্ত গরম হইয়া উঠিল। আর কি সে বসিয়া থাকিতে পারে! তখনই দাঁত কড়মড় করিতে করিতে ঝড়ের মতন আসিয়া উপস্থিত। তখন দুইজনে কী ভয়ানক যুদ্ধ হইল, তাহা কী বলিব! কিল আর চড়ের চোটে দুইজনের মুখ দিয়াই রক্ত উঠিতে লাগিল।

 এদিকে রাম বড়ই ভাবনায় পড়িয়াছেন। বালী আর সুগ্রীব দেখিতে একই রকম। তিনি মনে করিয়াছিলেন যে যুদ্ধের সময় বালীকে বাণ মারিবেন। কিন্তু এখন কোনটা যে বালী, তাহা তিনি বুঝিতেই পারিতেছেন না। বাণ মারিলে তাহতে বালী না মরিয়া যদি সুগ্রীব মরিয়া যায়, তবে তো সর্বনাশ!

 কাজেই তখন আর বাণ মারা হইল না। সে-যাত্রা সুগ্রীবকে কেবল অনেকগুলি কিল চড় খাইয়া হাঁপাইতে হাঁপাইতে ঋষ্যমূক পর্বতে পালাইয়া আসিতে হইল। সেখানে আসিয়া যে রামকে বলিল, ‘বন্ধু, এই বুঝি তোমার কাজ! তোমার কথায় আমি বালীর সঙ্গে যুদ্ধ করিতে গিয়া এতগুলি মার খাইলাম, আর তুমি চুপ করিয়া তামাশা দেখিলে!’

 তখন রাম তাহকে বুঝাইয়া দিলেন, ‘বন্ধু, রাগ করিও না। আমি যে কেন বাণ মারি নাই, তাহা শোন। তুমি আর বালী দেখিতে ঠিক একইরকম। কাজেই তোমাদের কোনটি কে, আমি কিছুই বুঝিতে পারি নাই। বালীকে মারিতে গিয়া যদি তোমাকে মারিয়া ফেলিতাম, তাহ হইলে লোকে আমাকে কী বলিত? তুমি আবার যুদ্ধ কবিতে যাও, আর এমন একটা কোন চিহ্ন লইয়া যাও যাহাতে আমি তোমাকে চিনিতে পারি। তাহা হইলে দেখিবে, এক বাণেই আমি বালীকে মারিয়া ফেলিব।’

 এই কথা বলিয়া তিনি লক্ষ্মণকে বলিলেন, ‘লক্ষ্মণ, তুমি ফুল-শুদ্ধ ঐ নাগপুষ্পী লতাটি আনিয়া সুগ্রীবের গলায় বাধিয়া দাও।’ লক্ষ্মণ তাহাই করিলেন।

 এবারে সুগ্রীবের মনে খুবই সাহস। সুতরাং সে আগের চেয়ে অনেক বেশী করিয়া চ্যাঁচাইতে লাগিল। তাহ শুনিয়া বালীও বাহির হইয়া আসিতে আর বিলম্ব করিল না। রাগ দু-জনেরই সমান। দুজনেই বলে, ‘ঘুঁষি মারিয়া তোর মাথা গুঁড়া করিয়া দিব।’ আর যুদ্ধও যেমন-তেমন