পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/১২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ছেলেদের রামায়ণ
১২৫

হইল না। কিল, চড়, লাথি, গুঁতা,আঁচড়, কামড়, কোনটারই ক্রটি নাই। তারপর আবার গাছ পাথর লইয়াও যুদ্ধ হইল। কিন্তু বালীর গায় জোর বেশী থাকাতে, শেষে সুগ্রীব কাবু হইয়া পড়িতে লাগিল।

 এমন সময় রামের বাণ ভয়ানক শব্দে বালীর বুকে আসিয়া বিধিল। বাণের ঘায় বালীকে মাটিতে পড়িতে দেখিয়া রাম লক্ষ্মণ তাহার নিকট ছুটিয়া আসিলেন। তখন বালী রামকে অনেক গালি দিল।

 সে বলিল, “তুমি কেমন লোক চুরি করিয়া কেন আমার উপর বাণ মারিলে? সামনে আসিয়া যুদ্ধ করিতে, তবে দেখিতাম! আমাকে মারিয়া তোমার কী লাভ হইল?’

 রাম বলিলেন, ‘তুমি দুষ্ট লোক, তোমাকে মারতে আমার কোন অন্যায় হয় নাই। আমার বন্ধুর নিকট আমি প্রতিজ্ঞা করিয়াছিলাম যে তোমাকে মারিব, কাজেই তোমাকে মারিয়াছি।’

 বালীকে মারিয়া বন্ধুর উপকার করিয়াছেন, কাজেই ইহাতে রামের মনে কষ্ট না হইতে পারে। কিন্তু শেষে যখন বালীর স্ত্রী তারা আর তাহার পুত্র অঙ্গদ সেখানে আসিয়া কাঁদিতে লাগিল, তখন সুগ্রীবও চক্ষের জল রাখিতে পারিল না।

 মরিবার সময় বালীর ভাল বুদ্ধি হইয়াছিল। তখন সে সুগ্রীবকে ডাকিয়া বলিল, ভাই, বুদ্ধির দোষে অন্যায় করিয়াছি, ক্ষমা কর। আমার অঙ্গদকে তোমার নিকট রাখিয়া গেলাম। তাহাকে তুমি তোমার পুত্রের মত দেখিও। এই বলিয়া সে নিজের গলার সোনার হার সুগ্রীবের গলায় পরাইয়া দিল। সেই সোনার হার বালীকে ইন্দ্র দিয়াছিলেন। তাহার গুণ অতি আশ্চর্য।

 বালীর মৃত্যুর পর রাম সুগ্রীবকে কিষ্কিন্ধ্যার রাজা আর অঙ্গদকে যুবরাজ করিলেন। তারপর সীতাকে খুঁজিবার আয়োজন হইতে লাগিল। সুগ্রীব হনুমানকে ডাকিয়া বলিল, ‘হনুমান, শীঘ্র বানরদিগকে সংবাদ দাও, যে সকল বানর খুব শীঘ্র চলিতে পারে, তাহারা দশ দিনের ভিতরে পৃথিবীর সকল বানরকে ডাকিয়া উপস্থিত করুক। মহেন্দ্র পর্বতে, হিমালয়ে, বিন্ধ্যাচলে, কৈলাসে আর মন্দর পর্বতে যে সকল বানর আছে, সমুদ্রের পারে, উদয় পর্বতে আর অস্ত পর্বতে, অঞ্জন পর্বতে, আর পদ্মাচলে কালো কালো হাতির মতন যে সকল বানর আছে পর্বতের গুহার ভিতরে, সুমেরুর পাশে যে সকল বানর আছে আর মহারুণ পর্বতে যে সকল ভয়ঙ্কর বানর আছে, আমাদের দূতেরা তাহদের সকলকেই এখানে ডাকিয়া আনুক।’

 তখনই চারিদিকে দূতসকল ছুটয়া চলিল, আর দেখিতে দেখিতে পৃথিবীর সকল বানর আসিয়া কিষ্কিন্ধ্যায় উপস্থিত হইতে লাগিল।

 অঞ্জন পর্বত হইতে আসিল তিন কোটি বানর,কৈলাস হইতে আসিল এক হাজার কোটি অস্তাচল হইতে দশ কোটি হিমালয়ের বানর ফল খায়, কিন্তু সিংহের মত জোরালো—সেই বানর এক হাজার খর্ব, গর্জন করিতে করিতে আসিয়া উপস্থিত হইল; বিন্ধ্য পর্বতের কালো বানর এক হাজার কোটি আসিল; ক্ষীরোদ সমুদ্রের পারে যে সকল বানর নারিকেল খাইয়া থাকে, তাহারাও আসিল।

 পৃথিবীর বানর আর আসিতে কেহ বাকি নাই। তাহা ছাড়া কিষ্কিন্ধ্যায় কত কোটি বানর আছে, তাহার হিসাব কে করিবে? বানরের পায়ের ধূলায় আকাশ অন্ধকার, সূর্য দেখা যায় না। কিষ্কিন্ধ্যাতে আর স্থান নাই। কত বানর আসিয়াছে আর কত আসিতেছে! তাহদের কেহ লাফায়, কেহ গর্জন করে, কেহ কেহ কুস্তি আরম্ভ করিয়াছে।