পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/১৪২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৪২
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

ভাবিতেছে, কখন হনুমান ফিরিয়া আসিবে। এমন সময় দূর হইতে তাহারা তাহার গর্জন এবং শোঁ-শোঁ শব্দ শুনিতে পাইল। তাহা শুনিয়া জাম্ববান বলিল, নিশ্চয় হনুমান সীতার সন্ধান পাইয়াছেনহিলে এত চ্যাঁচ্যাঁইবে কেন?

 জাম্ববানের কথায় বানরেরা আনন্দে লাফালাফি করিতে লাগিল। তাহাদের কেহ গাছে চড়ে, কেহ লেজ নাড়ে, কেহ কাপড় উড়ায়, আবার কেহ কেহ মাথা তুলিয়া খালি হনুমানের পথের দিকে চাহিয়া আছে। এমন সময় হনুমান ঝড়ের মতন ছুটিয়া আসিয়া ঢিপ করিয়া সেইখানে পড়িল।

 তাহাকে দেখিয়া বানরেরা আর কি তাহাদের আনন্দ সামলাইয়া রাখিতে পারে! তাহারা সকলেই অস্থির হইয়া উঠিল। কি করিয়া তাহাকে আদর আর সম্মান দেখাইবে, তাহাই যেন তাহারা ঠিক বুঝিয়া উঠিতে পারিতেছে না। কেহ তাহার বসিবার জন্য গাছের ডাল বিছাইয়া দেয়, কেহ ফল মূল আনিয়া দেয়, কেহ কেহ কিচিমিচি কবে। অনেকে কেবল হাত যোড় করিয়া দাঁড়াইয়া আছে। হনুমান আগে জাম্ববান অঙ্গদ প্রভৃতি গুরুজনকে প্রণাম করিয়া, তারপর সীতার এবং লঙ্কার খবর সকলকে শুনাইল।

 এতদিনে বানরদিগের মনে আবার সুখ আসিয়াছে। তাহাদের কাজ হইয়াছে, এখন সংবাদ লইয়া দেশে ফিরিবার সময় উপস্থিত। ফিরিবার পূর্বে একবার তাহারা মনে করিয়াছিল সীতাকে সঙ্গে করিয়া লইয়া যাইবে;কিন্তু শেষে ভাবিয়া দেখিল যে রামের অনুমতি ভিন্ন তাহ করা উচিত নহে। সুতরাং তাহারা তাড়াতাড়ি কিষ্কিন্ধ্যায় ফিরিয়া চলিল। তিন দিন আগে তাহাদেব মনে যেমন ভয় আর দুঃখ ছিল, এখন তেমনি উৎসাহ আর আনন্দ।

 তাহারা যখন কিষ্কিন্ধ্যার কাছে সুগ্রীবের মধুবনে আসিয়া উপস্থিত হইল, তখন তাহদের উৎসাহ আর থামাইয়া রাখিতে পারিল না। অঙ্গদ বলিল, “তোমরা পেট ভরিয়া মধু খাও!” তাহা শুনিয়া বানরেরাও আর তিলমাত্র বিলম্ব করিল না। পেট ভরিয়া মধু আব ফল ত তাহারা খাইলই, তাহার উপর আবার গাছপালা ভাঙিয়া বনের দুর্দশার একশেষ করিল। তাহদের না আছে মৌমাছির ভয়, না আছে পাহারাওয়ালার চিন্তা।

 সুগ্রীবের মামা দধিমুখ সেই বনের প্রহরী ছিল। সে তাহাদিগকে কত বারণ করিল, কত ধমকাইল, দুই-একজনকে মারিলও। কিন্তু বানরেরা কি তাহাতে থামে? বরং তাহাবা উলটিয়া দধিমুখেরই নানারকম দুর্দশা করিল। তাহাকে আঁচড়াইয়া কামড়াইয়া, কিলাইয়া, লেজ ধরিয়া টানিয়া বেচারার আর কিছু রাখিল না।

 তখন দধিমুখ আর তাহার লোকেরা বানরদের সহিত যুদ্ধ করিতে আসিল। কিন্তু যুদ্ধ করিয়া তাহারা পরিবে কেন? লাভের মধ্যে অঙ্গদের হাতে মার খাইয়া দধিমুখের হাড় ভাঙিবার গতিক হইল।

 তখন বেচারা কাদিতে কাদিতে সুগ্রীবের নিকট গিয়া নালিশ করিল। সুগ্রীব তাহার কথা শুনিয়া বলিল, মামা তোমার কথা শুনিয়া বড় সুখী হইলাম। নিশ্চয় উহারা সীতার সন্ধান পাইয়াছে। তাহ না হইলে কি এমন পাগলামি করিতে পারে? মামা, তুমি দুঃখ করিও না; শীঘ্র গিয়া উহাদিগকে পাঠাইয়া দাও।”

 দধিমুখও তাহা শুনিয়া ভাবিল, বা! তাইত, উহারা নিশ্চয় সীতার খবর আনিয়াছে।’ তখন কোথায় গেল তাহার বেদনা, কোথায় বা গেল তাহার কান্না। সে সকল দুঃখ ভুলিয়া আমনি