পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/১৪৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ছেলেদের রামায়ণ
১৪৫

রাক্ষস সঙ্গে লইয়া সেখান হইতে চলিয়া গেল।

 রাবণের সভা ছাড়িয়া বিভীষণ আর সেই চারিজন রাক্ষস সমুদ্র পার হইয়া রামের নিকটে চলিয়া আসিল। সেখানে সুগ্রীব আর অন্য অন্য বানরদিগকে দেখিয়া বিভীষণ বলিল, “আমি রাবণের ভাই, আমার নাম বিভীষণ। আমি সীতাকে ফিরাইয়া দিবার কথা বলাতে, রাবণ আমাকে গালি দিয়াছেন। তাই আমি রামের কাছে থাকিবার জন্য এখানে আসিয়াছি।’

 এই কথা শুনিয়া সুগ্রীব তাড়াতাড়ি রামের কাছে গিয়া সংবাদ দিল। বিভীষণকে সে বিশ্বাস করিতে পারে নাই। হনুমান ছাড়া বানরদিগের অন্য কেহ তাহাকে বিশ্বাস করে নাই। তাই তাহারা সকলে বিভীষণকে জায়গা দিতে রামকে বারবার নিষেধ করিল। খালি হনুমান বলিল, “উহার মুখ দেখিয়া ত উহাকে দুষ্ট লোক বলিয়া আমার বোধহয় না। ও যথার্থই আমাদের সহিত বন্ধুতা করিতে আসিয়াছে। উহাকে জায়গা দেওয়া উচিত।’

 সকলের কথা শুনিয়া রাম বলিলেন, “যে আশ্রয় চায় তাহাকে আশ্রয় দেওয়া উচিত। সে যদি দুষ্টও হয়, তথাপি তাহাব এমন ক্ষমতা নাই যে আমার অনিষ্ট করে। তোমরা শীঘ্র তাহাকে ডাকিয়া আন।’

 তখন বিভীষণ আসিয়া রামকে প্রণাম করিয়া বলিল, রাবণ আমায় অপমান করিয়াছেন, তাই আমি আপনার নিকট আসিয়াছি। এখন আপনাব ইচ্ছা হয় আমাকে রাখুন, না হয় মারিয়া ফেলুন।’

 রাম মিষ্ট কথায় তাহাব ভয় দূর করিয়া বলিলেন, ‘বিভীষণ, আমি রাবণকে মারিয়া, তোমাকে রাজা করিব।’ বিভীষণও বলিল, “আমি প্রাণ দিয়া আপনার সাহায্য করিব।’

 তখন রাম লক্ষ্মণকে বলিলেন, ‘চল, আমরা এখানেই বিভীষণকে লঙ্কার রাজা করি।” রাজা হইবার সময় মান করিতে হয়, সেই স্নানকে অভিষেক বলে। রামের কথায় লক্ষ্মণ তখনই সমুদ্রের জলে বিভীষণকে অভিষেক করিয়া তাহাকে লঙ্কার রাজা করিলেন।

 তারপর সুগ্রীব আর হনুমান বিভীষণকে জিজ্ঞাসা করিল, মহাশয়, সমুদ্র পার হইব কি করিয়া? বিভীষণ বলিল, বাম যদি সমুদ্রেব পূজা করেন, তবে অবশ্য সমুদ্র পার হওয়া যাইবে।’

 এ কথা শুনিয়া বানরেরা তখনই পূজার জোগাড় করিয়া, সমুদ্রের ধারে কুশাসন বিছাইয়া দিল। রাম তাহাতে বসিয়া সমুদ্রের পূজা আরম্ভ করিলেন। পূজা শেষ হইলে সমুদ্রকে প্রণাম করিয়া, তিনি সেই কুশাসনের উপর শুইয়া রহিলেন। এক দিন, দুই দিন, তিন দিন, চারি দিন রাম সেইখানে পড়িয়া আছেন, তবুও সমুদ্র তাহাব সংবাদ লয় না। তাহ দেখিয়া রাম বলিলেন, এত করিয়া পূজা করিলাম, আর তুমি গ্রাহাই করিলে না! তোমার এতই অহঙ্কার! আচ্ছ দাড়াও, তোমাকে শুষিয়া ফেলিতে কতক্ষণ লাগে!'

 এই বলিয়া রাম ধনুক লইয়া তাহাতে ব্রহ্মাস্ত্র জুলেন। সে অস্ত্রের তেজে চন্দ্র সূর্য অবধি কাঁপিতে লাগিল আর সাগরও প্রাণের ভয়ে আমনি হাত যোড় করিয়া উপস্থিত হইল। তারপর সে রামের নিকট অনেক মিনতি করিয়া বলিল, “এই নল বিশ্বকর্মর পুত্র। নল আমার উপর সেতু বাধিয়া দিলেই সকলে পার হইতে পারবে। সেতু যাহাতে না ভাঙে, সেজন্য আমি এখন হইতে খুব স্থির হইয়া থাকিব।’

 তখনই বানরেরা গাছ আর পাথর আনিয়া সমুদ্রের ধারে ফেলিতে লাগিল। নল কি আশ্চর্য

উপেন্দ্র—১৯