পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/১৪৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৪৬
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র



কারিকর। সেই গাছ পাথর দিয়া একশত যোজন লম্বা সুন্দর সেতু প্রস্তুত করিতে ছয় দিনের বেশি লাগিল না। সেই সেতুর উপর দিয়া সকলে পার হইয়া লঙ্কায় আসিল।

 রাম লঙ্কায় আসিয়াছেন শুনিয়া রাবণ শুক আর সারণ নামক তাহার দুইজন মন্ত্রীকে চুপি চুপি তাহার সৈন্য দেখিবার জন্য পাঠাইয়া দিল। শুক সারণ বানর সাজিয়া গিয়াছিল, কিন্তু তাহাদের সে ফাকিতে বিভীষণ ভুলিল না। সে তখনই তাহাদিগকে ধরিয়া রামের কাছে লইয়া গেল।

 শুক, সারণ ত ঠিক করিয়া রাখিয়াছে যে এ-যাত্রা আর তাহদের রক্ষা নাই; কেন না, শত্রুর লোক ঐরুপ চুরি করিয়া খবর লইতে আসিলে, তাহাকে মারিয়া ফেলাই দস্তুর। তাহারা রামের পায়ে পড়িয়া বলিল, “আমরা রাবণের হুকুমে আপনার সৈন্য গণিতে আসিয়াছিলাম।’

 তাহা শুনিয়া রাম হাসিয়া বলিলেন, “তোমাদের কিছু ভয় নাই। যদি সৈন্য দেখা হইয়া থাকে, তবে নিশ্চিন্তে ঘরে চলিয়া যাও। আর যদি দেখা না হইয়া থাকে, তবে ভাল করিয়া দেখিয়া যাও।’

 এ কথা শুনিয়া শুক, সারণ রামকে কত আশীর্বাদই করিল! তারপর তাহারা গিয়া রাবণকে বলিল, মহারাজ, যুদ্ধ করিয়া কাজ নাই। ইহারা বড় ভয়ানক বীর! সীতাকে ফিরাইয়া দিন।’ রাবণ বলিল, “তোমরা যে ভারি ভয় পাইয়াছ বল দেখি, এই পৃথিবীতে এমন কে আছে যে আমাকে যুদ্ধ করিয়া হারাইতে পারে? এই বলিয়া সে ছাদে উঠিয়া দেখিতে গেল, রামের সৈন্য কিরূপ।

 সাদা সাদা মেঘ আসিয়া যেমন করিয়া আকাশ ঢাকে, তেমনি করিয়া বানরেতে লঙ্কার চারিদিক ছাইয়া গিয়াছে। এই-সকল সৈন্য দেখিয়া সারণ রাবণকে কহিল, মহারাজ, ঐ দেখুন নীল, বীর দশ হাজার যোদ্ধা সঙ্গে লইয়া ফিরিতেছে। ঐ দেখুন বালীর পুত্র অঙ্গদ, উহার সঙ্গে অনেক কোটি সৈন্য। ঐ নল, যে সেতু বধিয়াছে। ঐ শ্বেত, ঐ কুমুদ, ঐ চণ্ড, ঐ সংরম্ভ, ঐ শরভ, ঐ পনস, ঐ বিনত, ঐ ক্রর্থন, ঐ গবয়, ঐ হয়। ঐ জাম্ববান, দেখুন তাহার সহিত কত ভালুক আসিয়াছে, ঐ রম্ভ, ঐ সন্নাদন, ঐ প্রমার্থী, ঐ গবাক্ষ, ঐ কেশরী, ঐ শতাবলী!

 মহারাজ, ঐ যে শাল গাছের মতন বড় বড় বানর দাড়াইয়া আছে, উহারা সুগ্রীবের লোক। উহাদের বাড়ি কিষ্কিন্ধ্যায়; উহারা সকলেই বড় বড় বীর। উহাদের মধ্যে ঐ দুইজনার নাম মৈন্দ আর দ্বিবিদ। আর হনুমানকে বোধহয় চিনিতে পারিয়াছেন;ঐ যে বসিয়া আছে। হনুমানের কাছে যিনি বসিয়া আছেন, তিনি রাম। তাঁহার কথা আর কি বলিব। যেমন দেখিতে সুন্দর, তেমনি দয়ালু, তেমনি বিদ্বান, তেমনি ধার্মিক, আর তেমনি বীর। উহার পাশে ঐ লক্ষ্মণ বসিয়া, সোনার মত রঙ, কোকড়ান কালো চুল, চওড়া বুক। দেখিতে যেমন, গুণেও তেমনি। উহার মতন বীর কোথাও নাই। লক্ষ্মণের পাশে ঐ দেখুন বিভীষণ বসিয়া আছেন। শুনিয়াছি রাম নাকি তাহাকে লঙ্কার রাজা করিয়াছেন। ঐ সুগ্রীব, যাহার গলায় সোনার হার আর শরীর পাহাড়ের মতন বড়।

 ‘মহারাজ, এক শত লক্ষে এক কোটি হয়। লক্ষ কোটিতে এক শঙ্কু, লক্ষ শঙ্কুতে এক মহাশঙ্কু, লক্ষ মহাশঙ্কুতে এক বৃন্দ, লক্ষ বৃন্দে এক মহাবৃন্দ, লক্ষ মহাবৃন্দে এক পদ্ম, লক্ষ পদ্মে এক মহাপদ্ম, লক্ষ মহাপদ্মে এক খর্ব, লক্ষ খর্বে এক সমুদ্র, লক্ষ সমুদ্রে এক মইোঘ। রামের সঙ্গে এইরূপ হিসাবে (১০০০০০, ১০০০০, ১০০০, ১০০০০০, ১০০০, ১০০০০০,