পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/১৫০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৫০
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

বানরদিগের কিসের কোলাহল? দেখ ত বিষয়টা কি রাক্ষসেরা দেখিয়া আসিয়া বলিল, মহারাজ ইন্দ্রজিৎ যাহা করিয়াছিলেন সব মাটি রাম লক্ষ্মণ নাগপাশের বাধন ছাড়াইয়া আবার উঠিয়া বসিয়াছে!” রাবণ তাহা শুনিয়া বলিল, বল কি? তবে ত সর্বনাশ!” এই বলিয়া সে রাম লক্ষ্মণকে মারিবার জন্য তাড়াতাড়ি ধূম্রাক্ষকে পাঠাইয়া দিল।

 গাধার মুখ সিংহের আর বাঘের মতন হইলে সে জানোয়ার দেখিতে কেমনটি বিকট হয়? সেইরূপ গাধায় ধূম্রাক্ষের রথ টানিত। সেই রথে চড়িয়া ধূম্রাক্ষ যুদ্ধ করিতে চলিল। সঙ্গে বর্ম-আঁটা সিপাহী সৈন্য, হাতি ঘোড়া মুষল, মুদগর, পরিঘ, পট্টিশ, ভিন্দিপালের আর শেষ নাই। রাক্ষসদের যেমন গর্জন তেমনি রাগ! যেন এক-একটা ভীত আর কি! পশ্চিম দরজায় হনুমানের পাহারা,রাক্ষসেরা দাঁত কড়মড় করিতে করিতে মার মার শব্দে সেইখানে আসিয়া উপস্থিত হইল।

 প্রথমে হনুমানের দলের ছোট ছোট বানরদিগের সহিত রাক্ষসদিগের যুদ্ধ আরম্ভ হইল। রাক্ষসদিগের অস্ত্র ধনুক ভাণ, শেল, শূল, মুষল, মুদগর প্রভৃতি:বানরদিগের অস্ত্র গাছ আর পাথর। যুদ্ধের সময় বানর আগে নিজের নামটি বলে, তারপর ‘জয়রাম’ শব্দে গাছ পাথর উঠাইয়া ধাই করিয়া রাক্ষসের মাথা ফাটায়। কেহ বা কিল চড় মারিয়া তাহাদের ছাতি ভাঙিয়া দেয়, নখে আঁচড়াইয়া নাক, কান ছিড়িয়া আনে! এইরূপে মার খাইয়া রাক্ষসেরা কিছুতেই বানরদিগের সামনে টিকিতে পারিল না।

 তাহা দেখিয়া ধূম্রাক্ষ এমনি তেজের সহিত বানরদিগকে তাড়া করিল যে তাহারা পলাইবার পথ পায় না। যাহা হউক, হনুমানের সামনে এত বাহাদুর আর কতক্ষণ থাকে? হনুমান তাহাকে এমনি এক পর্বতের চুড়া ছুড়িয়া মারিল যে তাহাতে তাহার রথখানি একেবারে চুরমার হইয়া গেল। ইহার আগেই সে গদা হাতে করিয়া রথ হইতে লাফাইয়া পড়িয়াছিল, তাই রক্ষানহিলে তাহাকেও রথের সঙ্গে যাইতে হইত। ততক্ষণে হনুমান গাছ দিয়া অন্যান্য রাক্ষসগুলিকে শেষ করিয়া দিয়াছে কেবল গদা হাতে ধূম্রাক্ষই বাকি। সেটা বড়ই ভয়ঙ্কর গদা; তাহার গায়ে বড় বড় কাটা। কিন্তু ভয়ঙ্কর হইলেও, তাহা দিয়া সে হনুমানের কিছু করিতে পারিল না। বরং হনুমানই পর্বতের চুড়া দিয়া তাহার মাথা গুঁড়া করিয়া দিল।

 ধূম্রাক্ষের পরে যে যুদ্ধ করিতে আসিল, তাহার নাম বজ্রদংষ্ট্র। বজ্রদংষ্ট্র অনেক যুদ্ধ করিয়া, শেষে অঙ্গদের হাতে মারা গেল।

 বড় বড় রাক্ষসেরা যুদ্ধ করিতে আসে আর বানরেরা তাহাদিগকে মারিয়া শেষ করে। এইরূপে অকম্পন যুদ্ধে আসিয়া হনুমানের হাতে, নরান্তক দ্বিবিদের হাতে, কুম্ভহনু জাম্ববানের হাতে আর প্রহস্ত নীলের হাতে প্রাণ দিল। রাক্ষস মারিয়া বানরদিগের আনন্দের সীমা নাই; আর যুদ্ধে যাহারা জয়লাভ করিল, তাহদের প্রশংসার শেষ নাই।

 এদিকে লঙ্কায় আবার যুদ্ধের বাজনা বাজিয়া উঠিল আর দেখিতে দেখিতে আবার অসংখ্য রাক্ষস যুদ্ধ করিবার জন্য বাহির হইয়া আসিল। এত রাক্ষস দেখিয়া রাম বিভীষণকে জিজ্ঞাসা করিলেন, ‘রাজা বিভীষণ, এত সৈন্য অত অস্ত্র লইয়া কে আসিল?’

 বিভীষণ বলিল, “ঐ যাহার রথের নিশানে সিংহের চেহারা দেখিতেছেন, সে ইন্দ্রজিৎ। আর ঐ যাহার খুব লম্বা চওড়া শরীর, তাহার নাম অতিকায়; সেও রাবণের পুত্র। ঐ যে হাতির গলায় ঘণ্টার শব্দ হইতেছে, তাহার উপরে মহোদর। ঐ যে লাল রঙের যোদ্ধা