পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/১৫১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ছেলেদের রামায়ণ
১৫১

ঘোড়ায় চড়িয়া আছে, তাহার নাম পিশাচ। শুল হাতে যাঁড়ের উপর চড়িয়া যে আসিতেছে, উহার নাম ত্রিশিরা। যাহার নিশানে সাপের ছবি, সে কুম্ভ। আর যাহার হাতে পরিঘ রহিয়াছে, সে নিকুম্ভ। ঐ যাহার মাথায় মুকুট আর উপরে সাদা ছাতা, তিনি নিজে রাবণ।”

 রাম বলিলেন, রাবণ আসিয়াছে? ভালই হইয়াছে আজ সীতাকে চুরি করিয়া আনিবার শাস্তিটা উহাকে দিতে হইবে।”

 রাবণকে দেখিয়া সুগ্রীব একটা পর্বতের চুড়া ছুড়িয়া মারিল। রাবণ সেই পর্বত কাটিয়া সুগ্রীবকে এমনই এক বাণ মারিল যে তাহাতে সে চিৎকার করিয়া একেবারে অজ্ঞান হইয়া গেল। তাহা দেখিয়া জ্যোতিমুখ, গবাক্ষ, গবয়, সুষেণ, ঋষভ আর নল ছুটয়া যুদ্ধ করিতে আসিল। কিন্তু তাহাদের সাধ্য কি যে রাবণের বাণের সম্মুখে টিকিয়া থাকে। বাণের যন্ত্রণায় অস্থির হইয়া বানরেরা একেবারে রামের কাছে গিয়া উপস্থিত। তখন রাম নিজেই যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হইতেছিলেন, এমন সময়ে লক্ষ্মণ বলিলেন, দাদা, আমি রাবণের সহিত যুদ্ধ করিব।”

 এদিকে হনুমান ছুটিয়া গিয়া রাবণকে বলিল, আজ এই এক কিলে তোর প্রাণ বাহির করিয়া দিব!’

 রাবণ বলিল, ‘মার দেখি তোর কত জোর! এই বলিয়া সে আগেই হনুমানের বুকে এক চড় মারিল। হনুমানের খুব লাগিল বটে, কিন্তু সে সামলাইয়া উঠিয়া রাবণের বুকে এক চড় মারিয়া তাহাকে একেবারে অস্থির করিয়া দিল। আবার রাবণ একটু সুস্থ হইয়া হনুমানের বুকে এমন এক কিল মারিল যে হনুমান সহজে তাহার চোট সামলাইয়া উঠিতে পারিল না।

 ততক্ষণে রাবণ হনুমানকে ছাড়িয়া নীলের সহিত যুদ্ধ আরম্ভ করিয়াছে। রাবণ বাণ মারে আর নীল গাছ পাথর মারে। ইহার মধ্যে নীল হঠাৎ খুব ছোট্টটি হইয়া কখন গিয়া রাবণের রথের নিশানে উঠিয়াছে। সেখান হইতে রাবণের মুকুটে, সেখান হইতে তাহার ধনুকের আগায়। এমনি করিয়া সে তাহাকে কি যে ব্যস্ত করিয়া তুলিল, তাহ বলিবার নহে। তাহা দেখিয়া বানরেরা যত হাসে, রাবণের রাগ ততই বাড়িয়া যায়। শেষে সে অগ্নিবাণে নীলকে অজ্ঞান করিয়া ফেলিয়া, লক্ষ্মণের সহিত যুদ্ধ আরম্ভ করিল।

 লক্ষ্মণ আর রাবণের অনেকক্ষণ খুব যুদ্ধ হইল। রাবণ বাণ মারে, লক্ষ্মণ তাহা কাটেন। আবার লক্ষ্মণ বান মারেন, রাবণ তাহা কাটে। একবার ব্রহ্মার দেওয়া একটা বাণ মারিয়া রাবণ লক্ষ্মণকে অজ্ঞান করিয়া ফেলিল। কিন্তু লক্ষ্মণ তখনই আবার সুস্থ হইয়া রাবণের ধনুক কাটিয়া, তারপর তিন বাণে তাহাকে অজ্ঞান করিয়া তবে ছড়িলেন।

 তারপর রাবণের আবার জ্ঞান হইলে সে একটা শক্তি হাতে লইল। এই শক্তিও ব্রহ্মা তাহাকে দিয়াছিলেন। ইহা অতি ভয়ানক অস্ত্র! লক্ষ্মণ বাণ মারিয়া তাহা কাটিলেন, তবুও সেটা আসিয়া তাহার বুকে বিধিয়া তাঁহাকে অজ্ঞান করিয়া ফেলিল। তখন রাবণ তাড়াতাড়ি লক্ষ্মণকে লইয়া যাইবার জন্য অনেক চেষ্টা করিল। কিন্তু তাহার সাধ্য কি যে তাহাকে নাড়ে। ততক্ষণে হনুমান আসিয়া তাহার বুকে এমনি এক কিল মারিল যে তেমন কিল আর সে কখনও খায় নাই; কিলের চোটে রাবণ রক্ত বমি করিতে করিতে অজ্ঞান হইয়া গেল।

 এদিকে হনুমান লক্ষ্মণকে কোলে করিয়া রামের নিকট লইয়া আসিয়াছে। সেখানে তাঁহার বুক হইতে শক্তি খসিয়া পড়িবামাত্র তিনি সুস্থ শরীরে উঠিয়া বসিলেন। ততক্ষণে রাবণও