পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/১৫৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ছেলেদের রামায়ণ
১৫৩

যে, তোমার যখন যেরূপ ইচ্ছা হইবে, তুমি সেইরূপ চেহারা করিতে পরিবে।’

 তারপর ব্রহ্মা বিভীষণকে জিজ্ঞাসা করিলেন, ‘তুমি কি বর চাহ? বিভীষণ বলিল, 'আমাকে দয়া করিয়া এই বর দিন যে আমার যেন সকল সময়েই ঈশ্বরেতে আর ধর্মেতে মতি থাকে।'

 তাহা শুনিয়া ব্রহ্মা বলিলেন, আচ্ছ তাহাই হইবে। আর তাহাছাড়া তুমি অমর হইবে।” এই বলিয়া তিনি কুম্ভকর্ণকে বর দিতে চাহিলেন।

 এমন সময় দেবতারা তাহাকে নিষেধ করিয়া কহিলেন, ‘দোহাই ঠাকুর, এই হতভাগাকে বর দিবেন না! ইহার জ্বালায় আমরা অস্থির হইয়াছি! এই দুষ্ট ইহারই মধ্যে সাতটা অঙ্গরা, ইন্দ্রের দশ জন চাকর আর তাহা ছাড়া বিস্তর মুনি ঋষি খাইয়া ফেলিয়াছে। বর না পাইতেই এমন, বর পাইলে কি আর কাহাকেও রাখিবে?'

 এই কথা শুনিয়া ব্রহ্মা তাড়াতাড়ি সরস্বতীকে ডাকিয়া বলিলেন, মা তুমি শীঘ্র গিয়া উহার বুদ্ধি নাশ করিয়া দাও।” ব্রহ্মার কথায সরস্বতী তখনই কুম্ভকর্ণের মনের ভিতর গিয়া ঢুকিলেন আর তাহতেই তাহার মাথায় এমনি গোল লাগিয়া গেল যে সে আর বুঝিয়া সুঝিয়া ব্রহ্মার সহিত কথা কহিতে পালিল না।

 ব্রহ্মা জিজ্ঞাসা করিলেন, ‘কুম্ভকর্ণ, কি বর চাহ? ‘

 কুম্ভকর্ণ বলিল, আমি দিনরাত খালি ঘুমাইতে চাহি।’

 ব্রহ্মা বলিলেন, “বেশ কথা, তাহাই হউক।’

 কুম্ভকর্ণের কথা অগস্তা মুনি এইরূপ বলিয়াছেন। কিন্তু তাহার কথা বিভীষণ যাহা বলিয়াছে, তাহা অন্যরূপ। বিভীষণ বলে যে কুম্ভকর্ণ অত্যন্ত দুষ্ট ছিল বলিয়া ব্রহ্মা নিজেই তাহাকে শাপ দিয়াছিলেন, ‘তুই ছয় মাস ঘুমাইবি আর একদিন জাগিয়া থাকিবি।’

 যাহা হউক, সে-অবধি কুম্ভকর্ণ কেবলই ঘুমায়। সেই কুম্ভকর্ণকে এখন রাক্ষসেরা জাগাইতে চলিল।

 একটা পর্বতের গুহার ভিতরে কুম্ভকর্ণের শুইবার ঘর। ঘরখানি অতি সুন্দর। তাহার মেঝে সোনার আর দেয়ালের কারিকুরি অতি আশ্চর্য। গুহাটি এক যোজন চওড়া আর তাহার দরজাও তেমনি বড়। বড় দরজা না হইলে কুম্ভকর্ণ ঘরে ঢুকিবে কি করিয়া? তাহার শরীর এতই বড় যে বিছানায় শুইয়া থাকিলেও তাহাকে একটা পর্বতের মতন দেখা যায়। তাহার নাকের নিশ্বাসে ঝড় বহে;সেই ঝড়ের চোটে রাক্ষসেরা ঘুরিতে ঘুরিতে পড়িয়া যায়।

 প্রথমে অনেক শুয়োর, হরিণ, মহিষ প্রভৃতি জন্তু আর কলসী কলসী রক্ত আনিয়া কুম্ভকর্ণের কাছে পাহাড়ের মতন করিয়া রাখা হইল। ঘুম হইতে উঠিয়া তাহার বিষম ক্ষুধা হইবে। তখন আর কিছু না পাইলে যাহারা জাগাইতে আসিয়াছে, তাহাদিগকে ধরিয়াই হয়ত মুখে দিবে। কাজেই আহারের যোগাড়টি সকলের আগে আর বেশ ভালরকম হওয়া চাই।

 তারপর তাহার গায় চন্দন লেপিয়া আর ঘরে ধূপ জ্বালাইয়া রাক্ষসেরা নানারকম শব্দ করিতে লাগিল। বড়বড় শখ, যাহার একটার আওয়াজ শুনিলে প্রাণ চমকিয়া যায়, তাহার কয়েক শত আনিয়া তাহারা একসঙ্গে বাজাইল। আবার কয়েক শত রাক্ষস মিলিয়া প্রাণপণে চিৎকার করিল। না জানি তখন ব্যাপারখানা কিরকম হইয়াছিল। রাক্ষসের চিৎকার ত সহজ

উপেন্দ্র—২০