পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/১৫৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৫৪
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

চিৎকার নহে, তাহার কাছে শঙ্খ কোথায় লাগে! সেই চিৎকারের সঙ্গে সঙ্গে আবার বাহু চাপড়াইবার ঘোরতর চটাপট শব্দ!

 এই সকল বিকট শব্দ তাহারা সকলে মিলিয়া একসঙ্গে করিয়াছিল। সে কি যেমন-তেমন কোলাহল! আকাশের পাখি তাহা শুনিলে মাথা ঘুরিয়া পড়িয়া যায়। এমনিতর শব্দ করিয়া তাহারা প্রাণপণে কুম্ভকর্ণের গায়ে নাড়া দিল। কিন্তু কুম্ভকর্ণের ঘুম তাহাতে ভাঙিল না।

 তারপর দশ হাজার রাক্ষস মিলিয়া তাহাকে প্রাণপনে কিল, গদার বাড়ি আর পাথরের গুতা মারিয়াও তাহাকে জাগাইতে পারিল না। বরং তাহাতে তাহার আরাম বোধ হওয়ায় সে এমনই নাক ডাকাইতে লাগিল যে তাহার নিশ্বাসের সামনে টিকিয়া থাকাই ভার!

 তখন সকলে একসঙ্গে গর্জন করিয়া, শঙ্খ, ভেরী ও ঢাকের বাদ্য আর মুগুরের গুতা হইতে আরম্ভ করিয়া, তাহার উপর আবার অনেক হাতি ঘোড়া আর উট আনিয়া তাহাকে মাড়াল। তাহাতেও যখন তাহার ঘুম ভাঙিল না, তখন তাহার চুল ছিঁড়িয়া কান কামড়াইয়া আর কানের ভিতর জল ঢালিয়া তাহাকে জাগাইবার চেষ্টা করিল। শতঘ্নী আনিয়া তাহাকে মারিল। কিন্তু কুম্ভকর্ণ কিছুতেই জাগিল না।

 শেষে তাহারা একেবারে এক হাজার হাতি দিয়া তাহাকে মাড়াইতে আরম্ভ করিল। এইবার কুম্ভকর্ণের বোধ হইল যেন কেহ অতিশয় আদরে তাহার গা টিপিয়া দিতেছে। তখন সে চক্ষুমেলিয়া বসিয়া হাই তুলিল। সেই হাই তোলা দেখিয়া কি আর কাহারও সেখানে দাঁড়াই থাকিতে ভরসা হয়? রাক্ষসেরা তখন তাড়াতাড়ি তাহাকে সেই শুয়োর ও মহিষের ঢিপি দেখাইয়া দিযাই, আমনি উর্ধ্বশ্বাসে ছুটিয়া দূরে চলিয়া গেল। কুম্ভকর্ণও মাংসের পর্বত আর রক্তের কলসীসকল সামনে পাইয়া তাহা শেষ করিয়া দিতে কিছুমাত্র বিলম্ব করিল না।

 রাক্ষসেরা এতক্ষণ ভয়ে-ভয়ে দূরে দাড়াইয়া ছিল। যখন তাহারা দেখিল যে কুম্ভকর্ণের ক্ষুধা কমিয়াছে, তখন তাহার কাছে আসিয়া নমস্কার করিল। তখনও কুম্ভকর্ণের চোখে ঘুম রহিয়াছে। সে খানিক রাক্ষসদিগের দিকে ঢুলু-ঢুলু চোখে বোকার মতন তাকাইয়া রহিল। তারপর জিজ্ঞাসা করিল, “আমাকে জাগাইলে কেন! কোন বিপদ হইয়াছে নাকি?’

 সেখানে মন্ত্রী যুপাক্ষ ছিল। সে হাত যোড় করিয়া বলিল, মানুষ আর বানর আসিয়া লঙ্কা ছারখার করিয়াছে।’ তাহা শুনিয়া কুম্ভকর্ণ বলিল, তবে আমি আগে সেই মানুষ আর বানরগুলিকে খাইয়া, তারপর দাদার সঙ্গে দেখা করিব।” রাক্ষসেরা কহিল, আগে রাজার সঙ্গে দেখা করিয়া তারপর যুদ্ধ করিতে গেলেই ভাল হয়। তখন কুম্ভকর্ণ রাবণের সঙ্গে দেখা করিতে চলিল।

 যাইবার সময় তাহার সেই বিশাল শরীর আর বিকট চেহারা দেখিয়া বানরেরা যে কি ভয় পাইয়াছিল, তাহা কি বলিব! তাহদের কেহ রামের কাছে গিয়া আশ্রয় লইল, কেহ ভয়ে মাটিতে শুইয়া পড়িল। অন্যেরা দুই লাফে কে কোথায় পলাইল, তাহার ঠিক নাই। তখন রাম বিভীষণকে জিজ্ঞাসা করিলেন, ‘ওটা আবার কি হে? এরূপ জন্তু ত আর কখনও দেখি নাই! এটা রাক্ষস, না দৈত্য?’

 বিভীষণ বলিল, ইনি বিশ্রবা মুনির পুত্র, নাম কুম্ভকর্ণ। ইনি জন্মিয়াই এত জন্তু ধরিয়া খাইতে আরম্ভ করেন যে ইহার ভয়ে সকলে ইন্দ্রের নিকটে গিয়া উপস্থিত হয়। ইন্দ্র তখন