পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/১৫৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।



ছেলেদের রামায়ণ
১৫৭

মারিতে আসিয়াছি, তোমার সহিত যুদ্ধ করিব না। এই বলিয়া সে রামের নিকট গিয়া উপস্থিত হইল।

 রামের বাণে তাহার হাতের গদা মাটিতে পড়িয়া যাইতে অধিক সময় লাগিল না। তখন আর তাহার অন্য অস্ত্র নাই; কাজেই সে পর্বতের চূড়া লইয়া যুদ্ধ করিতে আরম্ভ করিল। এদিকে বড় বড় বানরেরা দল বাঁধিয়া তাহার ঘাড়ে গিয়া উঠিয়াছে। সে যুদ্ধ করিবে, না বানরগুলিকেই ঝাড়িয়া ফেলিবে, বুঝিতে পারিতেছে না।

 কিন্তু রামের বাণ খাইয়াও কুম্ভকর্ণ সহজে কাহিল হইল না। যে বাণে বালী মরিয়াছিল তাহাও সে সহিয়া রহিল। ইহার মধ্যে কখন সে একটা লোহার মুদগর তুলিয়া লইয়াছে। সেই মুদগর ঘুরাইয়া সে রামের বাণও ফিরাইয়া দিতেছে, আবার বানরদিগকেও মারিতেছে। তাহা দেখিয়া রাম বায়ুবাণে সেই মুদগরসুদ্ধ তাহার হাতটি কাটিয়া ফেলিলেন। তখন কুম্ভকর্ণ বেদনায় চিৎকার করিতে করিতে, আর-এক হাতে একটা তালগাছ লইয়া রামকে মারিতে চলিল। রাম ইন্দ্র-অস্ত্রে সে হাতটাও কাটিয়া ফেলিলেন। কিন্তু তবুও সে ছুটিয়া আসিতে ছাড়িল না।

 তারপর রাম অর্ধচন্দ্র বাণ মারিয়া তাহার পা দুইটা কাটিলেন। তবুও সে গড়াইতে গড়াইতে হাঁ করিয়া রামকে গিলিতে চলিয়াছে। তখন রাম অনেকগুলি বাণ মারিয়া তাহার মুখের হাঁ বন্ধ করিয়া দিলেন, তারপর ইন্দ্র-অস্ত্রে মাথা কাটিয়া ফেলিলেন। কুম্ভকর্ণের মৃত্যু দেখিয়া রাক্ষসেরা ভয়ে চিৎকাব করিতে লাগিল, আর দেবতা, গন্ধর্ব, মুনি, ঋষিরা যার-পরনাই সন্তুষ্ট হইয়া কোলাহলে আকাশ কাঁপাইয়া তুলিলেন।

 রাবণ যখন শুনিল যে কুম্ভকর্ণের মৃত্যু হইয়াছে তখন তাহার আর দুঃখের শেষ রহিল না। প্রথমে সে অজ্ঞান হইয়া গিয়াছিল। জ্ঞান হইলে পর অনেক কাঁদিয়া শেষে বলিল, “হায়, আমি না বুঝিয়া ভাই বিভীষণকে অপমান করিয়াছিলাম, তাহার শাস্তি এখন পাইতেছি। আমার সব গেল।” এই বলিয়া সে আবার অজ্ঞান হইয়া গেল।

 রাবণের দুঃখ দেখিয়া তাহার পুত্র ত্রিশিরা বলিল, “মহারাজ, আপনি এত দুঃখ করিতেছেন কেন? আমি রাম লক্ষ্মণকে মারিয়া দিতেছি।” তাহ শুনিয়া দেবান্তক, নরান্তক ও অতিকায় নামক রাবণের আর তিন পুত্র এবং মহোদর ও মহাপার্শ্ব নামে ইহাদের দুই খুড়া বলিল যে তাহারাও যুদ্ধ করিতে যাইবে।

 ইহারা আসিয়া প্রথমে ছোট ছোট বানরদিগকে বড়ই অস্থির করিয়া তুলিয়াছিল। কিন্তু তাহার পরেই অঙ্গদ, হনুমান, নীল আর ঋষভ আসিয়া অতিকায় ছাড়া ইহাদের আর সকলকেই মারিয়া ফেলিল।

 অতিকায় তপস্যা করিয়া ব্রহ্মার নিকট একটা রথ, অনেকগুলি অস্ত্র আর এমন একটা বর্ম পাইয়াছিল যে তাহাতে কিছুই বিঁধিতে পারিত না। সেই বর্মের নাম অক্ষয় কবচ। এইসকলের জোরে অতিকায় লক্ষ্মণের সহিত অনেকক্ষণ যুদ্ধ করিয়াছিল। লক্ষ্মণ তাহাকে অনেক বাণ মারিলেন, কিন্তু তাঁহার কোন বাণই সেই বর্ম ভেদ করিতে পারিল না। এমন সময় পবন আসিয়া লক্ষ্মণের কানে কানে বলিলেন, ব্রহ্মাস্ত্র মার, অন্য অস্ত্রে এ রাক্ষস মরিবে না, ইহার গায়ে অক্ষয় কবচ আছে। এ কথা শুনিয়া লক্ষ্মণ ব্রহ্মাস্ত্র ছুঁড়িলেন। সে অস্ত্র আটকাইবার জন্য অতিকায় কত চেষ্টাই করিল, কত শক্তি, কত গদা, কত শূল ছুঁড়িয়া