পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/১৫৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৫৮
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

মারিল, কিন্তু ব্রহ্মাস্ত্র কি তাহাতে থামে। দেখিতে দেখিতে অতিকায়ের মাথা তাহাতে কাটিয়া দুইখণ্ড হইয়া গেল।

 ইহার পর আবার ইন্দ্রজিৎ যুদ্ধ করিতে আসিল। ইন্দ্রজিৎ মেঘের আড়ালে থাকিয়া যুদ্ধ করে। চোরের মত আড়াল হইতে সে সকলকে বাণ মারিল, অন্যেরা তাহার কিছুই করিতে পারিল না। তাহার বাণ খাইয়া সকল বানর অজ্ঞান হইয়া গেলেন। ইহাতে রাক্ষসেরা যে খুবই খুশি হইল, তাহাতে আর সন্দেহ কি? তাহারা নাচিতে নাচিতে লঙ্কায় গিয়া কহিল, “এবারে উহাদিগকে মারিয়া আসিয়াছি।”

 এদিকে রাম, লক্ষ্মণ, সুগ্রীব, অঙ্গদ, জাম্ববান, সকলেই অজ্ঞান, কেবল বিভীষণ আর হনুমান অজ্ঞান হয় নাই। তাহারা দুইজন মশাল লইয়া সকলকে খুঁজিয়া বেড়াইতে লাগিল। সেই অন্ধকার রাত্রিতে কোটি কোটি বানর যুদ্ধের জায়গায় পড়িয়া আছে ইহাদের ভিতর হইতে কাহাকেও খুঁজিয়া বাহির করা কি সহজ কাজ!

 অনেক খুঁজিতে খুঁজিতে তাহারা এক জায়গায় জাম্ববানকে দেখিতে পাইল। বিভীষণ তাহাকে জিজ্ঞাসা করিল, জাম্ববান, “তুমি কি বাঁচিয়া আছ?” তাহা শুনিয়া জাম্ববান অনেক কষ্টে উত্তর করিল, “চক্ষে তীর লাগিয়াছে চাহিতে পারি না। আপনার গলার শব্দে বোধ হইতেছে আপনি বিভীষণ। হনুমান বাঁচিয়া আছে ত?”

 বিভীষণ বলিল, “তুমি রাম লক্ষ্মণের কথা জিজ্ঞাসা করিলে না, অন্য কাহারও কথা জিজ্ঞাসা করিলে না, আগেই হনুমানের কথা কেন?”

 জাম্ববান বলিল, “হনুমান যদি বাঁচিয়া থাকে, তবে কোন ভয় নাই; আর যদি সে মরিয়া গিয়া থাকে, তবে আর উপায় নাই।”

 তখন হনুমান জাম্ববানকে প্রণাম করিল। হনুমানকে চিনিতে পারিয়া জাম্ববান বলিল, বাছা, তুমি ছাড়া এ সময়ে আমাদের আর কেহ নাই। তুমি চেষ্টা করিলে সকলকে বাঁচাইতে পার। হিমালয়ের পরে ঋষভ আর কৈলাস পর্বত। সেই দুই পর্বতের মাঝখানে ঔষধের পর্বত। সেখানে বিশল্যকরণী, মৃত্যুসঞ্জীবনী, সুবর্ণকরণী আর সন্থানী, এই চারিরকমের ঔষধ আছে শীঘ্র গিয়া তাহা লইয়া আইস।

হনুমান তখনই ঔষধ আনিতে চলিয়া গেল। হিমালয় পর্বত পার হইলে কৈলাস পর্বত, তাহার কাছে ঔষধের পর্বত। এতদূর যাইতে হনুমানের কিছুই বিলম্ব হইল না। কিন্তু সেখানে গিয়া দেখিল যে ঔষধ খুঁজিয়া বাহির করা বড়ই কঠিন। ঔষধের গাছ ঝক্‌-ঝক্‌ করিয়া জ্বলিতেছে, তাহা সে দূর হইতে দেখিতে পাইয়াছিল। কিন্তু কাছে আসিতেই তাহারা যে কোথায় লুকাইয়াছে কিছুই বুঝিবার জো নাই।

 তখন হনুমান রাগিয়া বলিল, আচ্ছা দাঁড়াও! আমি পাহাড়সুদ্ধই লইয়া যাইতেছি। এই বলিয়া গাছ পাথর, হাতি গণ্ডার, সবসুদ্ধ সেই প্রকাণ্ড পাহাড় ধরিয়া সে এমনই বিষম টান দিল যে সেই টানে একেবারে পাহাড়ের গোড়া অবধি চড়্‌-চড়্‌ শব্দে উঠিয়া আসিল। তারপর সেটাকে মাথায় করিয়া ফিরিয়া আসা ত এক মুহূর্তের কাজ!

 ঔষধ আনিয়া তাহা আর কাহাকেও খাওয়াইবার দরকার হইল না। সে এমনি আশ্চর্য ঔষধ যে তাহার গন্ধ পাইয়াই সকলে উঠিয়া বসিল—যেন তাহারা সবে ঘুম হইতে জাগিয়াছে। রাম লক্ষ্মণ উঠিলেন, বানরেরা সকলেই উঠিল। উঠিল না খালি রাক্ষসগুলি।