পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/১৭০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৭০
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

দিকে চায়।

 যাহা হউক, পাণ্ডবেরা পাঁচ ভাই ধৃতরাষ্ট্রের ছেলেদের সঙ্গেই রহিলেন। একশো পাঁচটি ছেলের একসঙ্গে থাকা, একসঙ্গে পড়া, একসঙ্গে খেলা, সবই একসঙ্গে হইতে লাগিল।

 খেলার সময় ধৃতরাষ্ট্রের পুত্রেরা ভীমের হাতে বড়ই নাকাল হয়। ভীমের জ্বালায় উহারা ভালো করিয়া খেলিতেই পায় না। খেলা আরম্ভ করিলেই ভীম কোথা হইতে আসিয়া তাহদের মাথায় মাথায় ঠোকাঠুকি করিয়া দেন। ইহারা একশো ভাই, ভীম একেলা। তবুও উহারা কিছুতেই তাঁহাকে আঁটিতে পারে না। তিনি তাহাদিগকে আছড়াইয়া ফেলিয়া চুল ধরিয়া এমনি টান দেন যে, বেচারারা তাহাতে চ্যাঁচাইয়া অস্থির হয়। জলে নামিয়া খেলা করিতে গেলে, তিনি তাহাদের দশজনকে একসঙ্গে জড়াইয়া ধরিয়া ডুব দেন, আর তাহারা আধমরা না হইলে ছাড়েন না। বেচারারা হয়তো ফল পাড়িবার জন্য গাছে উঠিয়াছে, এমন সময় ভীম আসিয়া সেই গাছে লাথি মারিতে থাকেন। লাথির চোটে গাছ এমনি নড়িয়া উঠে যে, ফলের সঙ্গে সঙ্গে উহারাও মাটিতে পড়িয়া যায়। কাজেই উহারা ভীমকে বড়ই হিংসা করে, আর তাঁহার কাছে বড়-একটা ঘেঁষে না।

 ভীমকে যতই দেখে, দুর্যোধনের মনে ততই ভয় হয়, আর ততই তাহার দুষ্টবুদ্ধি বাড়িয়া উঠে। সে কেবলই ভাবে, ‘এই ভীমটাকে বড় হইতে দিলেই তো আমাদের সর্বনাশ! সুতরাং, এইবেলা এটাকে মারিয়া ফেলিতে না পারিলে চলিতেছে না। ভীম মরিলে আর চারিটা ভাইকে বাঁধিয়া রাখিলেই চলিবে।’

 দুষ্ট বসিয়া বসিয়া খালি এইরূপ ভাবে। তারপর একদিন সে সকলকে বলিল, ‘চল আজ গঙ্গাস্নানে যাই!’ এই সহজ কথাটার ভিতর কি ফন্দি রহিয়াছে, তাহা তো পাণ্ডবেরা জানেন না, তাঁহারা কেবল জানেন গঙ্গায় ঝুটোপাটি করিয়া স্নান করিতে যারপরনাই আরাম। সুতরাং, স্নানের কথা শুনিয়াই সকলে ‘যাইব!’ ‘যাইব!’ বলিয়া প্রস্তুত হইলেন।

 প্রমাণকোটিতে গঙ্গাস্নানের আয়োজন হইল। প্রমাণকোটি অতি চমৎকার স্থান। গঙ্গার ধারে বাগান আর সুন্দর বাড়ি। জলযোগের আয়োজন সেখানে ভালো মতই হইয়াছে। কাজেই ছেলেদের আনন্দের আর সীমা নাই। বেশি খুশি অবশ্য মিঠাই দেখিয়া। মিঠাই যে তাঁহারা কি আনন্দ করিয়া খাইলেন, সে কি বলিব। আবার শুধু নিজে খাইয়া তৃপ্তি হয় না, যেটা ভালো লাগে, সেটা ভাইয়ের মুখে তুলিয়া দেওয়া চাই।

 তাহা দেখিয়া দুর্যোধন ভাবিল, ‘এইবার আবার সুবিধা।’ তারপর মিষ্ট মিষ্ট কথা বলিয়া, আর যারপরনাই আদর দেখাইয়া, হাসিতে হাসিতে দুরাত্মা বিষ মাখানো সন্দেশ ভীমের মুখে তুলিয়া দিল। ভীম কি জানেন? তিনি সন্দেশের সঙ্গে বিষ খাইয়া ফেলিলেন, কোনো সন্দেহ করিলেন না।

 তারপর অনেকক্ষণ ধরিয়া স্নান চলিল। শেষে ঝুটোপাটিতে ক্লান্ত হইয়া আর সকলেই কাপড় ছাড়িবার জন্য ঘরে গেলেন, গেলেন না শুধু ভীম। বিষের তেজে, আর তাহার উপর পরিশ্রমে, তিনি এতই দুর্বল হইয়া পড়িলেন যে, গঙ্গার ধারে একটু না শুইয়া থাকিতে পারিলেন না।

 সেইখানে ভীম কখন অজ্ঞান হইয়া পড়িয়াছে, দুর্যোধন ছাড়া তাহা আর কেহই জানিতে পারে নাই, ভীম অজ্ঞান হইতেই সেই দুষ্ট, লতা দিয়া তাঁহার হাত-পা বাঁধিয়া তাঁহাকে জলে