পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/১৭১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ছেলেদের মহাভারত
১৭১

ফেলিয়া দিল৷

 ভীম জলে ডুবিয়া গেলেন। কিন্তু ভগবান যাঁহাকে রাখেন, হাজার দুষ্টলোক মিলিয়াও তাঁহাকে মারিতে পারে না। ভীম ডুবিলেন বটে, আর অন্য স্থানে পড়িলে তিনি মরিয়াও যাইতেন, তাহাতে ভুল নাই, কিন্তু তাঁহাকে যেখানে ফেলিয়াছিল, ঠিক সেইখান দিয়া ছিল পাতালে যাইবার পথ—যেখানে সাপেরা আর তাহাদের রাজা বাসুকি থাকেন। ভীম সেই পাতালের পথ দিয়া ডুবিতে ডুবিতে একেবারে সেই সাপের দেশে গিয়া পড়িয়াছিলেন। আর পড়িবি তো পড়—একেবারে কতকগুলি সাপের ঘাড়ে! সে বেচারারা তাঁহার চাপে তখনই চেপ্টা হইয়া গেল৷

 তখন যে ভারি একটা গোলমাল হইল, তাহা বুঝিতেই পার। সাপের দল মহারাগে আসিয়া ভীমকে যে কি ভয়ানক কামড়াইতে লাগিল, তাহা আর বলিবার নয়৷

 ইহাতে কিন্তু ভীমের ভালোই হইল, কেননা, ভীমকে যে বিষ খাওয়ানো হইয়াছিল, সাপের বিষই হইতেছে তাহার ঔষধ। কাজেই সাপের কামড়ে ভীমের গায়ের বিষ কাটিয়া গেল। ভীম চক্ষু মেলিয়া উঠিয়া দেখেন, একি আশ্চর্য ব্যাপার! ‘তখন তিনি দুই মিনিটের মধ্যে বাঁধন ছিঁড়িয়া কিল চড়ের ঘায় সাপের বাছাদের কি দুর্দশাই করিলেন! সে কিল যাহারা খাইল, তাহারা তো মরিয়াই গেল। যাহারা পলাইতে পারিল তাহারা ঊর্ধ্বশ্বাসে তাহাদের রাজা বাসুকিকে গিয়া বলিল, “রাজা মহাশয়! সর্বনাশ! একটা মানুষের ছেলে আসিয়া সব মাটি করিল! আপনি শীঘ্র আসুন!”

 এ কথা শুনিয়াই বাসুকি ছুটিয়া দেখিতে আসিলেন, ব্যাপারখানা কি। আসিয়া দেখেন—কি আশ্চর্য! এ যে ভীম! “আরে তাইতো। ও ভীম! তুমি যে আমার নাতির নাতি! এসো ভাই কোলাকুলি করি!” বলিয়া বাসুকি ভীমকে জড়াইয়া ধরিয়া কতই আদর করিলেন! আর ধনরত্নই-বা তাঁহাকে কত দিলেন৷

 শুধু তাহাই নহে, ইহার উপর আবার অমৃত। বাসুকির বাড়িতে অমৃতের ভাণ্ডার ছিল। চৌবাচ্চার পর চৌবাচ্চা সারি সারি সাজানো, তাহা ভরিয়া খালি অমৃত রাখিয়াছে। সাপেরা ভীমকে সেই অমৃতের কাছে নিয়া বলিল, “যত ইচ্ছা খাও!”

 ভীম এক নিশ্বাসে এক চৌবাচ্চা খালি করিয়া দিলেন। তারপর আর-এক নিশ্বাসে আরএক চৌবাচ্চা! আর-এক নিশ্বাসে আর-এক চৌবাচ্চা! এমনি করিয়া আট চৌবাচ্চা অমৃত খাইয়া দেখিলেন, আর পেটে ধরে না৷

 যেমন খাওয়া তেমনি বিশ্রামটি তো চাই! ভীম আট চৌবাচ্চা অমৃত খাইয়া, আটদিন যাবৎ কেবলই ঘুমাইলেন৷

 যুধিষ্ঠির স্নান করিয়া বাড়ি ফিরিবার সময় ভীমকে দেখিতে পাইলেন না বটে, সেজন্য তখন তাঁহার মনে বেশি চিন্তা হইল না। তিনি ভাবিলেন, হয়তো ভীম আগেই চলিয়া আসিয়াছেন। বাড়ি ফিরিয়া মাকে প্রণাম করিয়াই যুধিষ্ঠির জিজ্ঞাসা করিলেন, “মা, ভীম যে আমাদের আগে চলিয়া আসিয়াছে, তাহাকে তো দেখিতেছি না। তুমি কি তাহাকে কোথাও পাঠাইয়াছ?”

 এ কথা শুনিয়াই কুন্তী নিতান্ত ব্যস্তভাবে বলিলেন, “সেকি কথা বাবা, আমি তো ভীমকে দেখিতে পাই নাই। হায় হায়, কি হইবে? শীঘ্র তার খোঁজ কর৷”