পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/১৮০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৮০
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

অস্ত্র ছড়িতে পার৷’

 অর্জুন গুরুকে প্রণাম করিয়া, জোড়হাতে অস্ত্রখানি লইলেন৷

 এমনি করিয়া রাজপুত্রদের অস্ত্রশিক্ষা শেষ হইল। সকলেই বড়-বড় বীর হইয়াছে এখন সকলকে ডাকিয়া ইঁহাদের বিদ্যার পরীক্ষা দেখাইবার সময় উপস্থিত। পরীক্ষার আয়োজন খুব ধুমধামের সহিত হইতে লাগিল। এক দিকে প্রকাণ্ড মাঠে শত-শত রাজমিস্ত্রী খাটিতেছে, আর-এক দিকে পরীক্ষার সংবাদ লইয়া দূতেরা দেশ-বিদেশে ঢোল পিটাইয়া ফিরিতেছে। লোকের উৎসাহের আর সীমা নাই। বুড়া ধৃতরাষ্ট্র পর্যন্ত বলিলেন, ‘এতদিনে অন্ধ বলিয়া আমার মনে দুঃখ হইতেছে, এমন খেলা আমি দেখিতে পাইলাম না।’

 পরীক্ষার দিন উপস্থিত। লোকজন যে কত আসিয়াছে তাহার সীমা-সংখ্যা নাই। নিশানে, ঝালরে, মণি-মুক্তায় সভাটি ঝলমল্ করিতেছে। খেলার জায়গা, অস্ত্র রাখিবার জায়গা, বাজনদারদের জায়গা, স্ত্রীলোকদের বসিবার জায়গা, রাজারাজড়াদের বসিবার জায়গা, সাধারণ লোকদের বসিবার জায়গা, সব এমন সুন্দর করিয়া সাজানো আর গুছানো যে দেখিলে আশ্চর্য বোধ হয়। লোকের কোলাহল আর বাজনার শব্দ মিশিয়া সমুদ্রের গর্জনকে হারাইয়া দিতেছে। সভার মধ্যে ভীষ্ম, ধৃতরাষ্ট্র, কৃপাচার্য এবং আর-আর সকলে বসিয়াছে। মেয়েদের জায়গায়, কুন্তী, গান্ধারী (দুর্যোধনের মা) প্রভৃতি সকলে দাসী চাকরাণী লইয়া উপস্থিত। এমন সময়ে দ্রোণাচার্য তাঁহার পুত্র অশ্বত্থামাকে সঙ্গে লইয়া রঙ্গভূমি অর্থাৎ খেলার জায়গায় আসিয়া দাঁড়াইলেন। তাঁহার চুল সাদা, দাড়ি সাদা, ধুতি সাদা, চাদর সাদা। বুকের উপরে সাদা পৈতা, গলায় সাদা ফুলের মালা, গায় শ্বেত চন্দন৷

 তারপর সকলের আগে দেবতার পূজা হইলে, চাকরেরা অস্ত্র-শস্ত্র আনিয়া রঙ্গভূমিতে উপস্থিত করিল৷

 এদিকে রাজপুত্রেরা সাজগোছ করিয়া প্রস্তুত! প্রত্যেকের পরনে সুন্দর দামী পোশাক, কোমরে কোমরবন্ধ, আঙ্গুলে আঙ্গুলপোষ (অর্থাৎ আঙ্গুল বাঁচাইবার জন্য চামড়ার ঢাকনা), হাতে ধনুক, পিঠে তৃণ। যুধিষ্ঠির সকলের বড় বলিয়া সকলের আগে, তারপর যিনি যত ছোট, তিনি তত পিছনে, এমনি করিয়া তাঁহারা রঙ্গভূমির দিকে আসিতে লাগিলেন। রাজপুত্রদের সুন্দর পোশাক আর উজ্জ্বল চেহারা দেখিয়া সকলেই আশ্চর্য হইল। তারপর তাঁহারা নানারকম অস্ত্র ছুঁড়িতে আরম্ভ করিলে, অনেকে খুব ভয়ও পাইল৷

 সেদিন দুর্যোধন আর ভীমের গদার খেলা বড়ই অদ্ভুত হইয়াছিল। এমন খেলা আর কেহ দেখে নাই। তাঁহারা বাহবাও পাইয়াছিলেন যতদুর হইতে হয়। এদিকে তাঁহাদের হাতির মতো গর্জন শুনিয়া দ্রোণ একটু ব্যস্ত হইয়া উঠিলেন। ইহার পরই হয়তো ইহারা চটিয়া গিয়া মুস্কিল বাধাইবেন। কাজেই তাড়াতাড়ি ইহাদিগকে থামাইয়া দিতে হইল৷

 তারপর অর্জুনকে আসিতে দেখিয়া লোকের আনন্দ আর ধরে না। কেহ বলে, ‘আরে ঐ অর্জুন! কেহ বলে, ইনি ভারি যোদ্ধা!’ কেহ বলে, ‘ইনি বড়ই ধার্মিক!’

 অর্জুন কি আশ্চর্য খেলাই দেখাইলেন। একবার অগ্নিবাণে ভীষণ আগুন জ্বালিয়া তিনি সকলের ত্রাস লাগাইয়া দিলেন। তারপরেই আবার বরুণবাণে জলের বন্যা বহাইয়া আগুন নিভাইয়া ফেলিলেন, এখন সকলে তল না হইলে বাঁচে! তখনই আবার বায়ুবাণ ছুটিল, অমনি জল উড়িয়া গিয়া সব পরিষ্কার ঝর্‌ঝরে! পর্জন্যাস্ত্রে তারপরের মুহূর্তেই মেঘ আসিয়া