পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/২০৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ছেলেদের মহাভারত
২০৫

সুন্দর, অথচ তাহাতে লোকজন নাই। ইহাতে তিনি আশ্চর্য হইয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, ‘ইহার কারণ কি?’ তাহা শুনিয়া কয়েকজন মুনি বলিলেন, ‘এই পাঁচ তীর্থে পাঁচটা কুমির আছে, কেহ জলে নামিলেই তাহারা তাহাকে ধরিয়া খায়। তাই এখানে কেহ স্নান করিতে আসে না৷’

 এ কথা শুনিয়া অর্জুন কুমির দেখিতে চলিলেন। মুনিরা অনেক নিষেধ করিলেও শুনিলেন না৷

 এই পাঁচ তীর্থের একটাতে গিয়া অর্জুন স্নান করিবার জন্য যেই জলে নামিয়াছেন, অমনি এক প্রকাণ্ড কুমির আসিয়া তাঁহার পা কামড়াইয়া ধরিয়াছে। আর অর্জুনও সেই মুহূর্তেই কুমিরকে ধরিয়া টানিতে টানিতে একেবারে ডাঙ্গায় আনিয়া তুলিয়াছেন৷

 কিন্তু একি আশ্চর্য! ডাঙ্গায় আসিয়াই কুমির আর কুমির নাই, সে পরমসুন্দরী একটি কন্যা হইয়া গিয়াছে। অর্জুন তো দেখিয়া অবাক। তিনি কন্যাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, ‘ইহার অর্থ কি? তুমি কে?’

 কন্যা বলিল, ‘মহাশয়, আমি অপ্সরা। আমার নাম বর্গা। আমরা চারিটি সখী আছে, তাহাদের নাম—সৌরভেয়ী, সমীচি, বুদ্বুদা আর লতা। আমরা এক তপস্বীকে অমান্য করিয়াছিলাম, তাহাতে তিনি রাগিয়া আমাদিগকে কুমির করিয়া দেন। তপস্বী বলিয়াছিলেন যে, কোনো মানুষ আমাদিগকে জল হইতে টানিয়া তুলিতে পারিলেই আমাদের শাপ দূর হইবে। তাই আমরা পাঁচজন এই পাঁচ তীর্থে বাস করি, আর মানুষ জলে নামিলেই তাহাকে ধরিয়া লইয়া যাই। কিন্তু এ পর্যন্ত আর কেহ আমাদিগকে টানিয়া ডাঙ্গায় তুলিতে পারে নাই, কাজেই আমরাও এতদিন কুমির থাকিয়া গিয়াছি। আজ আপনি আমাকে রক্ষা করিলেন। এখন আমার সখী চারিটিকে দয়া করিয়া উদ্ধার করুন৷’

 অর্জুন তখনই আর চারি তীর্থে গিয়া সেখানকার চারিটি কুমিরকে টানিয়া তুলিলেন। পাঁচটি অলরা পাপের দায় হইতে রক্ষা পাইয়া স্বর্গে চলিয়া গেল৷

 ইহার পর নানা প্রকার তীর্থ দেখিতে দেখিতে অর্জুন ক্রমে প্রভাসতীর্থে উপস্থিত হইলেন। এই তীর্থ কৃষ্ণের রাজ্যের মধ্যে। কৃষ্ণ অর্জুনের সংবাদ পাইয়া সেখানে আসিয়া তাঁহাকে দ্বারকায় লইয়া গেলেন৷

 বলরাম এবং কৃষ্ণের একটি ভগিনী ছিলেন, তাঁহার নাম সুভদ্রা। সুভদ্রার সহিত যেমন করিয়া অর্জুনের বিবাহ হইয়াছিল, সে এক আশ্চর্য কথা। রূপেগুণে সুভদ্রার মতো মেয়ে অতি কমই দেখা যায়। তাঁহাকে দেখিয়া অর্জুনের বড়ই ভালো লাগিল৷

 কৃষ্ণ অসাধারণ বুদ্ধিমান লোক ছিলেন, তিনি সহজেই বুঝিতে পারিলেন যে, অর্জুন সুভদ্রাকে বিবাহ করিতে চাচ্ছেন। ইহাতে তাঁর মনে অতিশয় আনন্দ হইল, কারণ, অর্জুনকে তিনি অত্যন্ত স্নেহ করিতেন, আর জানিতেন যে, সুভদ্রার সহিত বিবাহ দিবার জন্য এমন গুণবান লোক আর পাওয়া যাইবে না৷

 এখন এ বিবাহ কিরূপে হইতে পারে, কৃষ্ণ তাহাই ভাবিতে লাগিলেন। ক্ষত্রিয়দের বিবাহের নানারূপ নিয়ম আছে, কন্যাকে বলপূর্বক লইয়া গিয়া বিবাহ করা তাহার মধ্যে একটি। কৃষ্ণ বলিলেন, ‘এ নিয়মটি আমার বেশ লাগে। কেন, ইহাতে বুঝা যায় যে বর খুব বীরপুরুষ আর কন্যার জন্য সে অনেক বিপদ আর পরিশ্রম সহ্য করিতে প্রস্তুত৷’