পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/২১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ছেলেদের মহাভারত
২১৯

উহাতে বিবাদ উপস্থিত হইতে পারে৷’

 ধৃতরাষ্ট্র বলিলেন, ‘কি হইবে? আমরা তো থাকিব। তুমি শীঘ্র যাও৷’

 বিদুর আর কি করেন? তিনি কাজেই ইন্দ্রপ্রস্থে গিয়া যুধিষ্ঠিরকে বলিলেন, ‘ধৃতরাষ্ট্র তোমাকে পাশা খেলিতে ডাকিয়াছে, তুমি চল৷’

 এ কথা শুনিয়া যুধিষ্ঠির বলিলেন, ‘কাকা, পাশা খেলা কি ভালো? আপনি কি অনুমতি করেন?’

 বিদুর বলিলেন, ‘আমি অনেক নিষেধ করিয়াছিলাম, তথাপি আমাকে পাঠাইলেন। এখন তোমার যাহা ভালো মনে হয়, কর৷’

 যুধিষ্ঠির অনেক চিন্তা করিয়া বলিলেন, ‘আমাকে যখন পাশা খেলিতে ডাকিয়াছে, তখন আর না গিয়া উপায় নাই। কিন্তু উহারা বড় ধূর্ত। খেলার সময় ফাঁকি দেয়। না যাইবার উপায় থাকিলে আমি কখনই যাইতাম না৷’

 পরদিন ভীম, অর্জুন, নকুল, সহদেব, কুন্তী, দ্রৌপদী প্রভৃতিকে লইয়া যুধিষ্ঠির বিদুরের সহিত হস্তিনায় আসিলেন। তাহার পরের দিন সকালে খেলা হওয়ার কথা। এই খেলা পণ অর্থাৎ বাজি রাখিয়া হয়। খেলিবার পূর্বে কথা থাকে যে, আমি হারলে তোমাকে এই জিনিস দিব, আর তুমি হারিলে আমাকে এই জিনিস দিবে। এইভাবে যথা সময়ে খেলা আরম্ভ হইল৷

 যুধিষ্ঠিরের পাশা খেলা দেখিবার জন্য সভায় লোকের বড়ই ভিড় হইয়াছে। অনেক রাজা, ব্রাহ্মণ, পণ্ডিত এবং সাধারণ লোক সেখানে উপস্থিত। পাণ্ডবেরা পাঁচ ভাই সভার মাঝখানে বসিয়াছে, তাহাদের সামনেই শকুনিকে সর্দার করিয়া দুর্যোধনের দল। শকুনি বলিলেন, ‘যুধিষ্ঠির, সকলে বসিয়া আছে, খেলা আরম্ভ কর৷’

 যুধিষ্ঠির বলিলেন, ‘তোমরা সরল ভাবে খেলা করিও, ফাঁকি দিও না যেন৷’

 শকুনি বলিলেন, ‘যাহাব বেশি বুদ্ধি সেই ফাঁকি দেয়। ইহাতে দোষের কথা কি হইল? তোমার যদি ভয় থাকে, তবে নাহয় খেলিও না৷’

 যুধিষ্ঠির বলিলেন, ডাকিয়াছ যখন, তখন খেলিতেই হইবে। কাহার সহিত খেলিব, বল। এ কথায় দুর্যোধন বলিলেন, ‘পণের জিনিস সব আমি দিব, কিন্তু আমার হইয়া মামা খেলিবেন৷’

 যুধিষ্ঠির বলিলেন, ‘একজনের হইয়া আর-একজনের খেলা অন্যায়। যাহা হউক, খেলা আবম্ভ কর৷’

 খেলা আরম্ভ হইলে পর ধৃতরাষ্ট্র সভায় আসিলেন। ভীষ্ম, দ্রোণ, কৃপ, বিদুর প্রভৃতিও দুঃখিত ভাবে তাঁহার সঙ্গে আসিলেন৷

 তারপর যুধিষ্ঠির দুর্যোধনকে বলিলেন, ‘আমার এই গলার হার পণ রাখিলাম, তুমি কি রাখিলে?’

 দুর্যোধন বলিলেন, ‘আমারও ধনরত্ন অনেক আছে। এখন তুমি বাজি জিতিলেই হয়।’

 এই কথা বলিতে বলিতেই অমনি শকুনি পাশা ফেলিলেন, ‘এই দেখ, জিতিলাম৷’ সকলে দেখিল বাস্তবিকই শকুনির জিত৷

 ইহাতে যুধিষ্ঠির বলিলেন, ‘আইস, আবার খেলিতেছি। এবারে এক লক্ষ আট হাজার