পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/২২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ছেলেদের মহাভারত
২২৩

গায়ের কাপড় দুঃশাসন নিজেই কাড়িয়া লইতে গিয়াছিল। কিন্তু কি আশ্চর্য! দেবতার কৃপায় সে সময়ে তাঁহার গায় এতই কাপড় হইল যে, দুঃশাসন প্রাণপণে টানিয়াও তাহা শেষ করিতে পারে না। সে যত টানে, ততই লাল, নীল, হলদে, সোনালি, নানা রঙ্গের হইয়া কাপড় বাড়িয়া যায়। শেষে অপ্রস্তুত হইয়া হতভাগা বসিয়া পড়িল৷

 এদিকে এই আশ্চর্য ব্যাপার দেখিয়া সভায় ঘোরতর কলরব উপস্থিত হইয়াছে। রাজাগণ দ্রৌপদীর প্রশংসা করিতে করিতে দুঃশাসনকে গালি দিতেছেন, আর ভীম রাগে অস্থির হইয়া কাঁপিতেছেন। তারপর সভাব সকলকে ডাকিয়া তিনি বলিলেন, “তোমরা সকলে শোন! আমি ভীষণ যুদ্ধে এই দুরাত্মা দুঃশাসনের বুক চিরিয়া তাহার রক্ত খাইব, তবে ছাড়িব। যদি না খাই, তবে যেন আমার স্বর্গলাভ না হয়৷”

 এমন সময় বিদুর হাত তুলিয়া সকলকে থামাইয়া বলিলেন, “দ্রৌপদী এমন করিয়া কাঁদিতেছে, তবুও আপনারা কথা কহিতেছেন না, একাজটা কি ভালো হইল? শীঘ্র ইহার কথার বিচার করুন৷”

 তথাপি সকলে চুপ করিয়া রহিলেন। তখন কর্ণের কথায় আবার দুরাত্মা দুঃশাসন দ্রৌপদীকে ঘরে লইয়া যাইবার জন্য টানাটানি করিতে লাগিল। এইরূপে তাহারা দ্রৌপদীকে কত অপমান, আর পাণ্ডবদিগকে কতপ্রকার বিদ্রুপ করিল, তাহা বলিয়া আর তোমাদিগকে কষ্ট দিব না। যুধিষ্ঠির, অর্জুন, নকুল আর সহদেব সমস্তই চুপ করিয়া সহ্য করিলেন। কিন্তু ভীম রাগী লোক, তিনি তাহা সহিতে পারিবেন কেন? যখন যুধিষ্ঠিরকে অপমান করিয়াও দুর্যোধনের মন উঠিল না, তখন হাসিতে হাসিতে আবার দ্রৌপদীকে পা দেখাইলেন—আবার তাহা দেখিয়া কর্ণ হাসিতে লাগিলেন—তখন ভীম আর কিছুতেই স্থির থাকিতে পারিলেন না তিনি ভয়ংকর শব্দে সভা কাঁপাইয়া বলিলেন, “আমি যদি গদা দিয়া এই দুষ্টের উরু না ভাঙ্গি তবে যেন আমার স্বর্গে যাওয়া না হয়!”

 এতক্ষণে আর কাহারো বুঝিতে বাকি রহিল না যে এ-সকল ঘটনার ফল বড়ই ভয়ংকর হইবে। তখন ধৃতরাষ্ট্র প্রাণের ভয়ে আর নিন্দার ভয়ে দুর্যোধনকে তিরস্কার করিয়া দ্রৌপদীকে বলিলেন, “মা! তুমি আমার বধূগণের সকলের বড় বল, তুমি কি চাহ৷”

 দ্রৌপদী বলিলেন, “যদি আপনার দয়া হইয়া থাকে তবে যুধিষ্ঠিরকে ছাড়িয়া দিন৷”

 ধৃতরাষ্ট্র বলিলেন, “তাহাই হইবে। তুমি আর কি চাহ বল!”

 দ্রৌপদী বলিলেন, “ভীম, অর্জুন, নকুল আর সহদেবকে তাঁহাদের অস্ত্র-শস্ত্র সুদ্ধ ছাড়িয়া দিন৷”

 ধৃতরাষ্ট্র বলিলেন, “তাহাই হইবে। তুমি আর কি চাহ বল!”

 দ্রৌপদী বলিলেন, “আমি আর কিছুই চাহি না। ইহারা মুক্তি পাইলেই আমার সব পাওয়া হইল৷”

 তারপর যুধিষ্ঠির ধৃতরাষ্ট্রকে বলিলেন, “মহারাজ! এখন আমাদিগকে কি অনুমতি করেন?”

 ধৃতরাষ্ট্র বলিলেন, “তোমার মঙ্গল হউক। তুমি রাজ্যধন সমস্ত লইয়া গিয়া সুখে রাজত্ব কর৷”

 এইরূপে যুধিষ্ঠির সেখান হইতে বিদায় হইয়া ইন্দ্রপ্রস্থ যাত্রা করিলেন। কিন্তু দুর্যোধন, কর্ণ আর শকুনির ইহা সহ্য হইবে কেন? তাঁহারা বলিলেন, “এত কষ্ট করিয়া যাহা জিতিলাম,