পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/২২৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২২৪
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

এত সহজেই তাহা লইয়া যাইবে? এ কখনই হইতে পারে না।”

 দুষ্ট লোকে না করিতে পারে এমন কাজ নাই। তিন দুষ্ট মিলিয়া তখনই আবার ধৃতরাষ্ট্রের মত ফিরাইয়া দিলেন, স্থির হইল, আবার যুধিষ্ঠিরকে পাশায় ডাকিতে হইবে। এবারের পণ বনবাস। যে হারিবে সে হরিণের ছাল পরিয়া তেরো বৎসর বনবাস করিবে। এই তেরো বৎসরের শেষ বৎসর অজ্ঞাতবাস, অর্থাৎ এমনভাবে লুকাইয়া থাকা, যেন কেহ সন্ধান না পায়। সন্ধান পাইলে আবার বারো বত্সর বনবাস। বনবাসের পরে অবশ্য আবার আসিয়া রাজ্য পাইবার কথা রহিল। কিন্তু দুযোধন স্থির করিয়া রাখিলেন যে, একবার পাণ্ডবদিগকে তাড়াইতে পারিলে আর তাঁহাদিগকে রাজ্যে ঢুকিতে দিবেন না৷

 ডাকিলেন যখন খেলিতে হইবে, তখন কাজেই যুধিষ্ঠিরকে আবার আসিতে হইল, আর সেই ধূর্ত শকুনির ফাঁকিতে হারিয়া তেরো বৎসরের জন্য বনেও যাইতে হইল! যাইবার সময় দুষ্টেরা সকলে মিলিয়া পাণ্ডবদিগকে কম বিদ্রুপ করে নাই। পাণ্ডবেরা তখন কিভাবে চলিতেছে, দুর্যোধন কতই ভঙ্গিতে তাহার নকল করিলেন৷

 তাহাতে ভীম বলিলেন, “মুর্খ! তোমার বিদ্রুপে আমাদের কোনো ক্ষতি হইবে না। আমি আবার বলিতেছি, যুদ্ধের সময় তোমাকে বধ করিব, আর দুঃশাসনের বুক ভাঙ্গিয়া রক্ত খাইব৷”

 অর্জুন বলিলেন, “আমি কর্ণকে মারিব। হিমালয়ও যদি নড়িয়া যায়, সূর্যও যদি নিভিয়া যায়, তথাপি আমার এ কথা মিথ্যা হইবে না৷”

 সহদেব শকুনিকে বলিলেন, “দুষ্ট! তুই নিশ্চয় জানিস, আমি তোকে বধ করিব৷”

 যুধিষ্ঠির সকলের নিকট, এমন-কি, ধৃতরাষ্ট্রের পুত্রদের নিকটেও বিনয়ের সহিত বিদায় চাহিয়া বলিলেন, “আবার আসিয়া আপনাদের সহিত দেখা করিব।” লজ্জায় কেহ তাঁহার কথায় উত্তর দিতে পারিলেন না। কিন্তু মনে মনে সকলেই তাঁহাকে অনেক আশীর্বাদ করিলেন। বিদুর বলিলেন, “কুন্তী বনে গেলে বড় ক্লেশ পাইবেন, তাঁহাকে আমার নিকটে রাখিয়া যাও৷”

 যুধিষ্ঠির বলিলেন, “আমাদের পিতা নাই, আপনিই আমাদের পিতার মতন। আপনি যাহা বলিলেন, তাহাই হউক। আমাদিগকে আর কি উপদেশ দেন?”

 বিদুর বলিলেন, “তোমাদের মতো ধার্মিক লোককে আর বেশি উপদেশ কি দিব? আশীর্বাদ করি, তোমাদের ভালো হউক৷”

 কুন্তীর নিকট বিদায় লইবার সময় সকলেরই খুব কষ্ট হইয়াছিল, বিশেষ কুন্তীর। তাঁহার কান্নায় বুঝি তখন পাষাণ গলিয়াছিল৷

 এইরূপে সকলের নিকট বিদায় হইয়া পাণ্ডবেরা দ্রৌপদী ও ধৌম্যের সহিত বনবাসে যাত্রা করিলেন।

 দুষ্ট দুঃশাসনের টানে দ্রৌপদীর মাথার বেণী খুলিয়া গিয়াছিল, সে বেণী আর তিনি বাঁধেন নাই, প্রতিজ্ঞা করিয়াছেন যে, এই দুরাত্মাগণের উচিত শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত তাহা আর বাঁধিবেন না।

 পাণ্ডবেরা চলিয়া গিয়াছে, ধৃতরাষ্ট্র বিদুর প্রভৃতিকে লইয়া কথাবার্তা কহিতেছেন, এমন সময় হঠাৎ নারদ অন্যান্য অনেক মুনির সহিত তাঁহার সম্মুখে উপস্থিত হইয়া বলিলেন,