পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/২২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ছেলেদের মহাভারত
২২৫

“আজ হইতে তেরো বৎসর পরে, চতুর্দশ বৎসরে, দুর্যোধনের দোষে ভীমাৰ্জুনের হাতে কৌরবদের সকলের মৃত্যু হইবে৷”

 এই বলিয়া নারদ চলিয়া গেলেন, আর ধৃতরাষ্ট্র বসিয়া নিজের দুর্বুদ্ধির কথা ভাবিতে লাগিলেন৷

বনপর্ব

ল্ডবেরা সকলের নিকট বিদায় লইয়া, অস্ত্র হাতে ক্রমাগত উত্তর দিকে চলিতে লাগিলেন। ইন্দ্রসেন প্রভৃতি চৌদ্দজন চাকরও সপরিবারে গাড়ি চড়িযা তাঁহাদের সঙ্গে চলিল। তখন অনেক ধার্মিক ব্রাহ্মণ কৌববদিগের উপরে নিতান্ত বিরক্ত হইয়া বলিলেন, “এই দুষ্টগণের রাজ্যে বাস করিতে নাই, আমরাও পাণ্ডবদিগের সঙ্গে যাইব৷”

 এই সকল ব্রাহ্মণকে সঙ্গে আসিতে দেখিয়া যুধিষ্ঠিরেব আনন্দও হইল, কষ্টও হইল। নিজেদেব এইরূপ অবস্থা, কি খাইবেন তাহার ঠিক নাই, তাহার মধ্যে রোজ এতগুলি ব্রাহ্মণের আহাব যোগান তো সহজ কথা নহে, তাই যুধিষ্ঠিব তাঁহাদিগকে বিনয করিযা বলিলেন, “আপনারা আমাদিগকে এত স্নেহ কবিয়া আমাদের সঙ্গে আসিয়াছেন, কিন্তু বনের ভিতরে আপনাদিগকে কি দিয়া খাওয়াইব, তাহা ভাবিয়া আমি অস্থির হইতেছি। আমাদের সঙ্গে আসিলে আপনাদের ক্লেশ হইবে, আপনারা ঘরে ফিরিয়া যান৷”

 ব্রাহ্মণেরা বলিলেন, “মহারাজ, আমরা আপনাকে ছাড়িযা থাকিতে পারিব না। আমাদের আহারের জন্য আপনার কোনো চিন্তা নাই, আমবা নিজে ভিক্ষা করিয়া খাইব৷”

 এইরূপ অবস্থা দেখিয়া যুধিষ্ঠির ধৌম্যকে বলিলেন, “ইহুদিগকে খাইতে দিবার শক্তি আমার নাই, অথচ ইহাদিগকে ছাড়িতেও পারিতেছি না! এখন উপায় কি, বলুন৷”

 ধৌম্য বলিলেন, “মহারাজ, সূর্যের পূজা করুন, ইহার উপায় হইবে৷”

 এ কথায় যুধিষ্ঠির সূর্যের পূজা আরম্ভ করিলে, সূর্যদেব সেখানে উপস্থিত হইয়া বলিলেন, “মহারাজ, আমি তোমার পূজায় তুষ্ট হইয়া এই থালি-খানা আনিয়াছি। আমার আশীর্বাদে এবং এই থালির গুণে, বারো বৎসর তোমার অন্নের চিন্তা থাকিবে না। প্রতিদিন, দ্রৌপদী যতক্ষণ না আহার করিবেন, ততক্ষণ এই থালির নিকট ফল, ফুলুরি, মাংস, মিঠাই যত চাও ততই পাইবে। তেরো বৎসর পরে তোমরা রাজা ফিরিয়া পাইবে৷” এই বলিয়া তিনি আকাশে মিলাইয়া গেলেন৷

 সে আশ্চর্য থালি পাইয়া আর যুধিষ্ঠিরের কোনো চিন্তা রহিল না। বারো বৎসর পর্যন্ত, যতক্ষণ দ্রৌপদীর খাওয়া না হইত, ততক্ষণ উহ নানারূপ খাবার জিনিসে পরিপূর্ণ থাকিত। যত লোকই আসুক না কেন, উহা শেষ করিতে পারিত না। কিন্তু দ্রৌপদীর খাওয়া শেষ

উপেন্দ্র—২৯