মহাদেব, ইন্দ্র, যম, বরুণ, কুবের প্রভৃতি দেবতাকে তপস্যায় তুষ্ট করিয়া সহজেই বড়-বড় অস্ত্রলাভ করিতে পারিবেন৷’
এই বিদ্যা পাইয়া পাণ্ডবদের মনে খুবই আশা হইল। যুধিষ্ঠিরের নিকট ইহা শিখিবার পর অর্জুন তখনই তপস্যায় বাহির হইতে আর বিলম্ব করিলেন না। কবচ, গাণ্ডীব, অক্ষয় তূণ প্রভৃতি লইয়া তপস্যায় বাহির হইলেন। যাত্রা করিবার সময় সকলে তাঁহাকে প্রাণ ভরিয়া আশীর্বাদ করিলেন, ‘তোমার সিদ্ধিলাভ হউক৷’
তারপর হিমালয় আর গন্ধমাদন পর্বত পার হইয়া ইন্দ্রকীল নামক পর্বতে উপস্থিত হইলেন। এমন সময় কোথা হইতে একটি কৃষ্ণকায় তপস্বী আসিয়া তাঁহাকে বাধা দিয়া হাসিতে হাসিতে বলিলেন, ‘কে হে তুমি, ধনুর্বাণ লইয়া এখানে আসিয়াছ? এখানে ধনুর্বাণ দিয়া কি করিবে? উহা ফেলিয়া দাও৷’
অর্জুন ইহাতে ধনুক বাণ না ফেলায় তপস্বী খুশি হইয়া বলিলেন, ‘বাছা, বর লও। আমি ইন্দ্র।’
অর্জুন জোড়হাতে ইন্দ্রকে প্রণাম করিয়া বলিলেন, ‘আপনার নিকট অস্ত্রশিক্ষা করিতে আসিয়াছি। দয়া করিয়া সেই বর দিন৷’
ইন্দ্র বলিলেন, ‘আগে শিবকে সন্তুষ্ট কর, তারপর অস্ত্র পাইবে৷’ এই বলিয়া ইন্দ্র চলিয়া গেলেন, অর্জুনও হিমালয়ের নিকটে আসিয়া শিবের তপস্যা আরম্ভ করিলেন৷
ক্রমাগত চারিমাস ধরিয়া তিনি অতি ভয়ংকর তপস্যা করিয়াছিলেন। প্রথম মাসে তিনদিন অন্তর আহার করিতেন, দ্বিতীয় মাসে ছয়দিন অন্তর, তৃতীয় মাসে পনেরো দিন অন্তর। চতুর্থ মাসে কেবল বাতাস ভিন্ন আর কিছুই খান নাই, অঙ্গুষ্ঠমাত্র ভর করিয়া উধর্ব হস্তে, সারাটি মাস দাঁড়াইয়া, কেবলই তপস্যা করিয়াছিলেন৷
এদিকে সেখানকার মুনি-ঋষিগণের মনে, বড়ই ভাবনা উপস্থিত! অর্জুনের সেই ভয়ানক তপস্যাব তেজে ইহারই মধ্যে চারিদিক ধোঁয়ার মতো হইয়া উঠিয়াছে। তাঁহারা সকলে ব্যস্তভাবে শিবের নিকট গিয়া বলিলেন, ‘প্রভো! আমরা অর্জুনের তপস্যার তেজ সহিতে পারিতেছি না। ইহাকে শীঘ্র থামাইয়া দিন!’
মহাদেব কহিলেন, ‘তোমরা ব্যস্ত হইও না। আমি আজই অর্জুনকে সন্তুষ্ট করিয়া দিতেছি৷’ সুতরাং মুনিরা নিশ্চিন্ত মনে ঘরে ফিরিয়া গেলেন৷
ততক্ষণে শিব আর দুর্গাও কিরাত-কিরাতিনীর বেশে অর্জুনের তপস্যার স্থানে গিয়া উপস্থিত হইয়াছে। ভূতগুলিও নানা সাজে সঙ্গে চলিয়াছে৷
এদিকে আবার কোথাকার একটা দানব শূকর সাজিয়া অর্জুনকে মারিতে আসিয়াছে, অর্জুনও গাণ্ডীব টানিয়া তাহাকে বধ করিতে প্রস্তুত। এমন সময় ব্যাধের বেশে মহাদেব আসিয়া তাহাকে বাধা দিয়া বলিলেন, ‘আরে থামো ঠাকুর! আমি আগে নিশানা করিয়াছি (ধনুক উঠাইয়াছি)৷’
সামান্য ব্যাধের কথা অর্জুনের গ্রাহই হইল না। তিনি তাহা তুচ্ছ করিয়া শুকরের উপর তীর ছুঁড়িলেন। ব্যাধও ঠিক তাহার সঙ্গে সঙ্গেই এক তীর ছুঁড়িল। এখন এই কথা লইয়া দুজনে ভয়ানক তর্ক উপস্থিত৷