পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/২২৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ছেলেদের মহাভারত
২২৯

 অর্জুন বলিলেন, ‘আমার শিকারে তুমি কেন তীর ছুঁড়িতে গেলে? দাঁড়াও, তোমাকে সাজা দিতেছি।’

 ব্যাধ হাসিতে হাসিতে বলিল, ‘আমি আগে নিশানা করিয়াছিলাম, আমার তীরেই শূকর মরিয়াছে! তুমি দেখিতেছি বেয়াদব! দাঁড়াও তোমাকে সাজা দিতেছি।’

 এ কথায় অর্জুন বিষম রাগিয়া ব্যাধের উপরে কতই বাণ মারিলেন। ব্যাধ বাণ খাইয়া খালি হাসে, আর বলে, ‘আরো মার্! দেখি তোর কত অস্ত্র আছে!’

 অর্জুনের যত বড়-বড় বাণ আর ভারি-ভারি অস্ত্র ছিল, তিনি তাহার কোনোটাই ছুঁড়িতে বাকি রাখিলেন না। ব্যাধ বাণ খায়, আর কেবলই হাসে। অর্জুনের এমন যে অক্ষয় তূণ, ক্রমে তাহাও খালি হইয়া গেল। কিরাত তাহার সকল বাণ গিলিয়া খাইয়া তখনো হাসিতেছে! বাণ ফুরাইলে অর্জুন গাণ্ডীব দিয়াই কিরাতকে মারিতে গেলেন, সে সর্বনেশে মানুষ তাহাও কাড়িয়া লইল। তারপর খড়্গ লইয়া দু হাতে কিরাতের মাথায় মারিলেন, খড়্গ দুখানা হইয়া গেল! সকল অস্ত্র শেষ হইলে গাছ পাথর ছুঁড়িতে লাগিলেন, তাহাতেও কিছু ফল হইল না। শেষে ভয়ানক রাগের ভরে কিরাতকে জড়াইয়া ধরিতে গেলে, সে তাঁহাকে ধরিয়া এমনি চাপিয়া দিল যে, তাহাতে তিনি একেবারে অজ্ঞান হইয়া গেলেন৷

 জ্ঞান হইলে অর্জুন মাটির শিব গড়িয়া, ফুলের মালা দিয়া তাহার পূজা করিতে বসিলেন। সেই ফুলের মালা অর্জুনের গড়া শিবে না পড়িয়া, একেবারে সেই কিরাতের মাথায় গিয়া উপস্থিত! তাহা দেখিয়া অর্জুনও তাড়াতাড়ি তাহার পায়ে গিয়া পড়িলেন। কারণ, তখন আর তাঁহার বুঝিতে বাকি রহিল না যে, ‘এ ব্যাধ নয়, স্বয়ং শিব৷’ অর্জুন বলিলেন, “প্রভো, না জানিয়া যুদ্ধ করিয়াছি, অপরাধ ক্ষমা করুন৷”

 মহাদেব বলিলেন, “অর্জুন! আমি বড়ই সন্তুষ্ট হইয়াছি। এই লও, তোমার গাণ্ডীব। তোমার তৃণও আবার অক্ষয় হইল। তুমি যথার্থ বীর পুরুষ, এখন বর লও৷”

 অর্জুন বলিলেন, “দয়া করিয়া আমাকে আপনার পাশুপত নামক অস্ত্র দান করুন৷”

 তখন মহাদেব তাঁহাকে সেই অস্ত্র দিয়া, তাহা ছাড়িবার এবং থামাইবার মন্ত্র শিখাইয়া দিলেন, সেই ভয়ংকর অস্ত্রের তেজে তখন ভূমিকম্প আর বজ্রপাতের মতো শব্দ হইয়াছিল৷

 অর্জুনকে অস্ত্র দিয়া মহাদেব চলিয়া গেলে পর, বরুণ, কুবের, যম আব ইন্দ্রও সেখানে আসিয়া তাঁহাকে নানারূপ অস্ত্র দিলেন। যমের দণ্ড, বরুণের পাশ, প্রভৃতি অতি আশ্চর্য এবং ভয়ংকর অস্ত্র। এ অস্ত্রসকল তো অৰ্জুন পাইলেনই, তারপর স্বর্গে গিয়া ইন্দ্রের এবং দেবতাদিগের নিকটে কত আদর কত মান্য, কত শিক্ষা পাইলেন, তাহা লিখিয়া শেষ করা যায় না। ইন্দ্রের নিকটে যে-সকল আশ্চর্য অস্ত্র পাইয়াছিলেন, তাহা দ্বারা অর্জুন নিবাত কবচ নামক দৈত্যদিগকে বধ করেন। তাহাতে দেবতাদের অনেক উপকার হয়। ইহা ছাড়া চিত্রসেন নামক গন্ধর্বের নিকট শিক্ষা করিয়া, তিনি সংগীত বিদ্যায় অসাধারণ পণ্ডিত হইয়াছিলেন, আর ইহাতে তাঁহার কত উপকার হইয়াছিল, তাহা শীঘ্রই দেখিতে পাইবে। এইরূপে স্বর্গে তাঁহার পাঁচ বৎসর পরম সুখে কাটিয়া যায়৷

 এদিকে কাম্যক বনে পাণ্ডবেরা অর্জুনের কথা ভাবিতে ভাবিতে নিতান্ত দুঃখিতভাবে দিন কাটাইতেছেন। তিনি কোথায় কিভাবে আছেন, কত দিনে ফিরিবেন, কিছুই তাঁহাদের জানা নাই, সুতরাং দুঃখ হইবার কথা। মাঝে মাঝে কোনো ধার্মিক মুনি-ঋষি আসিলে, তাঁহার