পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/২৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৩০
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

সহিত কথাবার্তায় কয়েকদিন তাঁহাদের মন একটু ভালো থাকে। একবার বৃহদশ্ব মুনি অসিয়া তাঁহাদের নিকট কিছুদিন রহিলেন। ইনি আশ্চর্যরকম পাশা খেলা জানিতেন। এই সুযোগে তাঁহার নিকট খুব ভালো করিয়া সেই খেলা শিখিয়া লওয়ায়, যুধিষ্ঠিরের অনেক উপকার হইল৷

 ইহার কিছুদিন পরে লোমশ মুনি স্বর্গ হইতে অর্জুনের সংবাদ লইয়া কাম্যক বনে আসেন। তাঁহার নিকটে সকল কথা শুনিয়া অর্জুনের সম্বন্ধে পাণ্ডবদের ভয় দূর হইল৷

 লোমশ বলিলেন যে, ‘অর্জুন পাণ্ডবদিগকে নানারূপ তীর্থ দেখিয়া বেড়াইতে বলিয়াছেন৷’ সুতরাং তাঁহারা লোমশ মুনির সঙ্গেই তীর্থ ভ্রমণে বাহির হইলেন। ভারতবর্ষের প্রায় কোনো তীর্থই তাঁহারা দেখিতে বাকি রাখিলেন না। প্রভাস নামক তীর্থে কৃষ্ণ বলরাম প্রভৃতির সহিত তাঁহাদের দেখা হইল। সেই সময়ে যদুবংশের সকলে পাণ্ডবদিগের দুঃখে নিতান্ত দুঃখিত হইয়া প্রতিজ্ঞা করিলেন যে, যত শীঘ্র পারেন তাঁহারা কৌরবদিগকে মারিয়া পাণ্ডবদিগকে রাজা করিবেন। তাঁহারা তখনই যুদ্ধ আরম্ভ করিতে প্রস্তুত ছিলেন, কৃষ্ণ অনেক বলিয়া কহিয়া তাঁহাদিগকে থামাইয়া রাখিলেন। কারণ, পাণ্ডবেরা নিজের কথামত বনবাস শেষ না করিয়া কিছুতেই রাজ্য লইতে সম্মত হইতেন না৷

 এইরূপে তীর্থ দেখিতে দেখিতে ক্রমে তাঁহারা কৈলাস পর্বতে নিকটে আসিয়া উপস্থিত হইলেন। এ-সকল স্থান অতি ভয়ানক। একে তো পর্বতের উপর দিয়া চলাই খুব কঠিন, তাহাতে আবার যক্ষ রাক্ষসেরা ক্রমাগত সেখানে পাহারা দেয়। সুতরাং ভয়ের কথাই বটে, এ সময়ে ভীম সকলকে সাহস দিয়া বলিলেন, “ভয় কি? চলিতে না পারিলে আমি পিঠে করিয়া লইব৷”

 পাণ্ডবেরা গন্ধমাদন পর্বতে উঠিবামাত্র ভয়ানক ঝড় উপস্থিত হইল। ঘোরতর গর্জনে হাওয়া চলিয়াছে পাথর ছুটিয়া আসিতেছে, চারিদিক অন্ধকার, প্রাণ থাকে কি যায। ভীম অনেক কষ্টে দ্রৌপদীকে লইয়া একটা গাছ ধরিয়া রহিলেন। অন্যেরাও কেহ গাছ ধরিয়া, কেহ উইটিপি আঁকড়াইয়া, কেহ-বা গুহার ভিতর ঢুকিয়া প্রাণ বাঁচাইলেন। এত শ্রম আর কষ্টের পর দ্রৌপদীর আর চলিবার শক্তি রহিল না। তাহার দুঃখে অন্য সকলেরও দুঃখের একশেষ হইল। তখন ভীম মনে মনে ঘটোৎকচকে ডাকিলেন। ডাকিবামাত্র ঘটোৎকচ অনেক রাক্ষস-সহ আসিয়া বলিল, “বাবা! কেন ডাকিতেছ? কি করিতে হইবে?”

 ভীম বলিলেন, “বাছা! দ্রৌপদী চলিতে পারিতেছেন না, তাঁহাকে বহিয়া লইয়া চল৷”

 ঘটোৎকচ তখনই দ্রৌপদীকে আর তাহার সঙ্গের রাক্ষসেরা অন্য সকলকে কাঁধে লইয়া চলিল। ইহাদের সাহায্য না পাইলে পাণ্ডবদিগের খুবই কষ্ট হইত, তাহাতে সন্দেহ নাই। উহারা তাঁহাদিগকে অনেক কঠিন স্থান পার করিয়া বদরী নামক তীর্থে পৌছাইয়া দিল। এই স্থানের নিকট হইতেই অর্জুন স্বর্গে গিয়াছিলেন, আর এখানেই তাঁহার ফিরিয়া আসিবার কথা। সুতরাং পাণ্ডবেরা এইখানে তাঁহার জন্য অপেক্ষা করিতে লাগিলেন৷

 ইহার মধ্যে একদিন কোথা হইতে এক আশ্চর্য পদ্মফুল আসিয়া দ্রৌপদীর নিকট পড়িল। সে ফুলের এমনি চমৎকার গন্ধ যে তাহা নাকে ঢুকিবামাত্র প্রাণ ঠাণ্ডা হইয়া যায়। দ্রৌপদী ফুলটি পাইয়া ভীমকে বলিলেন, “কি চমৎকার ফুল। আমাকে এইরূপ আরো অনেকগুলি ফুল আনিয়া দিতে হইবে। আমি কাম্যক বনে লইয়া যাইব৷”