পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/২৩৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ছেলেদের মহাভারত
২৩৩

আসিয়া উপস্থিত হইলেন। অর্জুনকে পাইয়া পাণ্ডবদের এবং দ্রৌপদীর সুখের সীমা রহিল না৷

 ইহার পরে আবার পাণ্ডবেরা কাম্যক বনে ফিরিয়া আসিলেন। ফিরিবার সময় অবশ্য পথে অনেক ঘটনা হইয়াছিল, কিন্তু তাহার কথা বিশেষ করিয়া বলিবার দরকার নাই। কেবল ভীম একটা সাপের মুখে পড়িয়া কিরূপে নাকাল হইয়াছিল, তাহা একটু শুন৷

 বদরিকাশ্রম হইতে যাত্রা করিয়া কিছুদিন পরে পাণ্ডবেরা সুবাহু নামক এক কিরাত রাজার দেশে আসিয়া উপস্থিত হন। এই স্থানে যামুন নামক একটা পর্বত আছে, তাহার কাছে বনের ভিতরে নানারকম শিকার মিলে। ভীম খুবই উৎসাহের সহিত শিকার করিয়া বেড়ান। ইহার মধ্যে একদিন এক ভয়ংকর সাপ তাঁহাকে ধরিয়া বসিয়াছে। ধরিবামাত্রই ভীমের বল সাহস সব কোথায় যেন চলিয়া গেল, তিনি কিছুতেই সাপের বাঁধন এড়াইতে পারিলেন না৷

 সাপটা আবার মানুষেব মতো কথা কয়। সে বলিল যে বহুকাল পূর্বে পাণ্ডবদেরই বংশে সে নহুস নামে রাজা ছিল, অগস্ত্য মুনির শাপে এখন সাপ হইয়াছে। ভীমের পরিচয় পাইয়া সে বলিল, “দেখিতেছি, তুমি আমারই বংশের লোক। কিন্তু তথাপি তোমাকে না খাইয়া থাকিতে পারিতেছি না৷”

 ভীমের বড় ভাগ্য যে, সেই সময়ে যুধিষ্ঠির তাঁহাকে খুঁজিতে খুঁজিতে সেখানে আসিয়া উপস্থিত হইলেন। ভীমের দশা দেখিয়া তো তিনি একেবারে অবাক। তিনি তাঁহাকে ছাড়িয়া দিবার জন্য সাপকে অনেক মিনতি করিলেন, কিন্তু সে তাহাতে রাজি হইল না। শেষে যুধিষ্ঠির জিজ্ঞাসা করিলেন, “কি হইলে তুমি ভীমকে ছাড়িতে পার?”

 সাপ বলিল, “আমার কথার উত্তর দিতে পার তো ইহাকে ছাড়িয়া দিই, কেননা, তাহা হইলে আমার শাপ দূর হইবে৷”

 যুধিষ্ঠির তাহাতেই সম্মত হইলেন। কিন্তু সে সর্বনেশে সাপ আবার এমনি ভয়ানক পণ্ডিত যে ব্রহ্মাণ্ডের যত উৎকট প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করিয়া সে যুধিষ্ঠিরকে ব্যস্ত করিয়া তুলিল। যাহা হউক, সে তাঁহাকে ঠকাইতে পারিল না। শেষে খুশি হইয়া বলিল, “তোমার বিদ্যা দেখিয়া আমি খুব সন্তুষ্ট হইয়াছি, সুতরাং তোমার ভাইকে খাইব না৷”

 বাস্তবিক যুধিষ্ঠির না আসিলে সেদিন সাপের হাতে পড়িয়া নিশ্চয় ভীমের প্রাণ যাইত৷

 পাণ্ডবেরা কাম্যক বন হইতে দ্বৈত বনে গিয়া একটি সুন্দর সরোবরের ধারে এক কুঁড়ে ঘরে বাস করিতে লাগিলেন। ইহার মধ্যে কি এক ঘটনা হইল শুন। দুষ্ট লোকেরা সাধুদিগকে কেবল ক্লেশ দিয়াই সন্তুষ্ট হয় না, ক্লেশটা কেমন হইতেছে, তাহা আবার দেখিতে চাহে। পাণ্ডবেরা নিতান্ত কষ্টে বনবাস করিতেছেন, এ কথা দুর্যোধন প্রভৃতিরা শোনেন, আর তাঁঁহাদের খালি দুঃখ হয়, আহা উহারা কেমন কষ্ট পাইতেছে, তাহার তামাশাটা একবার দেখিতে পাইলাম না, আর আমাদের জাঁকজমকটাও উহাদিগকে দেখাইতে পারিলাম না। যতই তাঁহারা এ কথা ভাবেন, ততই তাঁহাদের মনে হয় যে, এ কাজটা না করিলেই চলিতেছে না। কিন্তু তাহা কেমন করিয়া হইতে পারে? ধৃতরাষ্ট্র কি সহজে তাঁহাদিগকে দ্বৈত বনে যাইতে দিবেন?

 অনেক ভাবিয়া চিন্তিয়া শেষে তাঁহারা ইহার এক উপায় স্থির করিলেন। দ্বৈত বনে দুর্যোধনের অনেক গোয়ালা প্রজা বাস করে, রাজার গোরু-বাছুর রাখার ভার তাহাদের​উপেন্দ্র—৩০